রোজা অবস্থায় ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ ও পানাহার
রোজা অবস্থায় ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ ও পানাহার
▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬
প্রশ্ন: স্বপ্নে পানাহার করলে বা স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা নষ্ট হবে?
উত্তর:
ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের নিজস্ব কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই হাদিসে ঘুমকে “মৃত্যুর সহচর” বলা হয়েছে এবং হাদিসে এসেছে, এ সময় বান্দার কলম উঠিয়ে রাখা হয়। অর্থাৎ ঘুমন্ত অবস্থায় বা স্বপ্ন মারফতে সে ভালো-মন্দ যা কিছু করুক বা যা কিছু দেখুক তাতে তার আমলনামায় নেকি বা গুনাহ কোনটাই লেখা হয় না।
মা আয়েশা রা. সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ المُبْتَلَى حَتَّى يَبْرَأَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَكْبُرَ
“তিন ধরণের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। যথা:
❂ ১. ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়,
❂ ২. অসুস্থ (পাগল) ব্যক্তি, যতক্ষণ না আরোগ্য লাভ করে এবং
❂ ৩. অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, যতক্ষণ না প্রাপ্তবয়স্ক হয়।
[সুনান আবু দাউদ (তাহকিক কৃত) ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি, পরিচ্ছেদ: ১৬. পাগল চুরি বা হাদ্দযোগ্য অপরাধ করলে-সহিহ]
অত:এব ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন মারফত খাওয়া-দাওয়া করলে তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না।
➧ অনুরূপভাবে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নদোষ তথা ঘুমন্ত অবস্থায় সহবাস কিংবা বীর্যপাত হলেও রোজার কোনও ক্ষতি হবে না। সুতরাং ঘুম থেকে উঠে স্বাভাবিকভাবে রোজা অব্যাহত রাখবে।
তবে ঘুম থেকে উঠে যদি কাপড়ে বা শরীরে বীর্যপাতের চিহ্ন দেখতে পায় বা বুঝতে পারে যে, তার বীর্যপাত হয়েছিলো তাহলে তার শরীর নাপাক (জুনুবি) বলে গণ্য হবে।
সুতরাং জাগ্রত হওয়ার পর গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি। গোসল ব্যতিরেকে শরীর পবিত্র হবে না। (পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করতে হবে)
➧ কেউ যদি স্বপ্নে নারী-পুরুষের সহবাস/মিলন করে বা এমন দৃশ্য দেখে কিন্তু তাতে বীর্যপাত না হয় তাহলে গোসল ফরজ হবে না। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের একই বিধান।
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ; أَنَّ أُمَّ سُلَيْمٍ – وَهِيَ امْرَأَةُ أَبِي طَلْحَةَ – قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! إِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحِي مِنَ الْحَقِّ, فَهَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ الْغُسْلُ إِذَا احْتَلَمَتْ? قَالَ: «نَعَمْ. إِذَا رَأَتِ الْمَاءَ»
উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, আবু তালহা এর স্ত্রী উম্মে সুলাইম বলেন, হে আল্লাহর রসূল, আল্লাহ হক কথায় লজ্জাবোধ করেন না। স্বপ্নদোষ হলে নারীর উপরও কি গোসল ফরজ হয়?
তিনি বললেন, “হ্যাঁ, যদি সে পানি (বীর্য) দেখে।” [বুখারি ও মুসলিম]
এখান থেকে বুঝা গেল, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কেউ যদি ঘুমের মধ্যে যৌন ক্রিয়া বা অশ্লীল কিছু দেখে কিন্তু তাতে বীর্যপাত না হয় তাহলে তাতে গোসল ফরজ হবে না আর বীর্যপাত হলে গোসল ফরজ হবে।
মোটকথা, ঘুমের মধ্যে পানাহার, স্ত্রী মিলন বা বীর্যপাত যা কিছু ঘটুক তাতে রোজার কোনও ক্ষতি হবে না। তবে বীর্যপাত হলে গোসল ফরজ হবে। গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা ব্যতিরেকে সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন স্পর্শ, মসজিদে দীর্ঘ সময় অবস্থান, কাবা ঘরের তওয়াফ ইত্যাদি করা বৈধ নয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার,সৌদি আরব