চলমান বিশ্বময় করোনা সঙ্কটে বাড়িতে তারাবিহ ও ঈদের সালাত আদায় এবং যাকাতুল ফিতর প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি ফতোয়া
▰▰▰▰▰◉◈◉▰▰▰▰▰
সৌদি আরবের কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস (Council of Senior Scholars) এবং ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক কমিটির প্রেসিডেন্ট শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন মোহাম্মদ আলুশ শায়খ বলেন, নতুন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ যে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সে প্রেক্ষিতে লোকজন ঈদ এবং তারাবির সালাত বাড়িতেই আদায় করবে।
চলমান মহামারীর প্রেক্ষিতে মাহে রমজান সম্পর্কে সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক শাইখের নিকট উত্থাপিত কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
❑ প্রথম প্রশ্ন:
বাড়িতে তারাবির সালাত আদায় করা কি বৈধ?
উত্তরে তিনি বলেন, নতুন করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ যে সকল সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রেক্ষিতে এ বছর রমজান মাসে মসজিদে তারাবির সালাত আদায় করা সম্ভব নয়। সুতরাং রমজানুল মোবারকে কিয়ামুল লায়ল (রাতের নফল সালাত/তারাবিহ) এর মর্যাদা পেতে লোকজন বাড়িতেই সালাত আদায় করবে। তাছাড়া এটি হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে বাড়িতে কিয়ামুল লায়ল করেছেন। আর এ কথা স্পষ্ট যে, তারাবির সালাত সুন্নত; ওয়াজিব নয়।
❑ দ্বিতীয় প্রশ্ন:
বাড়িতে ঈদের সালাত আদায় করা কি বৈধ?
তিনি বলেন, যদি বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে এবং ঈদগাহে অথবা সালাতের জন্য নির্ধারিত মসজিদগুলোতে ঈদের সালাত আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায় করা হবে। তবে ঈদের সালাতের পরে যে খুতবা দেওয়া হয় সেটা হবে না।
ইতোপূর্বে সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয় কমিটির যে ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে তা হল: “কারো যদি ঈদের সালাত ছুটে গিয়ে থাকে এবং সে তা কাযা করতে চায় তাহলে ঈদের সালাতের পরে যে খুতবা দেয়া হয় সেটা ছাড়া ঈদের সালাতের নিয়ম ঠিক রেখে তা কাযা করে নেয়া মুস্তাহাব (উত্তম)।”
সুতরাং মুসলিম সর্ব সাধারণকে নিয়ে জামাআতে ইমামের সাথে ঈদের সালাত আদায় করা সম্ভব না হওয়ার কারণে যদি তা (একাকী) কাযা করা মুস্তাহাব হয়ে থাকে তাহলে যদি কোথাও ঈদের সালাত আদৌ কায়েম করা না হয় তাহলে আরও যৌক্তিক ভাবে তা (একাকী/আলাদাভাবে) কায়েম করা বৈধ হবে। কারণ এতে ‘সাধ্যানুযায়ী’ ইসলামের এই নিদর্শনটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। আল্লাহ বলেন: “তোমরা সাধ্যমতো আল্লাহকে ভয় করো।” আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, “আমি যখন তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ করি তখন তোমরা সাধ্য অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করবে।”
❑ তৃতীয় প্রশ্ন:
একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, যাকাতুল ফিতর এর সর্বশেষ সময় হল, ঈদের সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত। আর কেবল মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববি ছাড়া কোন শহরেই ঈদের সালাতের জামাআত কায়েম করা হবে না। তাহলে এ ক্ষেত্রে অন্যান্য শহরগুলোতে ফিতরা আদায়ের সর্বশেষ সময় কখন ধরা হবে আর কখন তাকবীরের শেষ সময় ধরা হবে যা শুরু হয়েছিল রমজানের শেষ দিন সূর্য ডোবার মাধ্যমে-ঈদের রাত থেকে যদি ঈদের সালাতের জামাআত কায়েম করা না হয়?
উত্তরে তিনি বলেন:
যেখানে ঈদের জামাআত কায়েম হবে না সেখানে যাকাতুল ফিতর আদায় করা এবং ঈদের রাত থেকে শুরু করে ঈদের সকালে তাকবীর পাঠ করার সর্বশেষ সময় হচ্ছে, সূর্য উদিত হওয়ার পর এতোটুকু সময় পর্যন্ত যতটুকু সময়ের মধ্যে ঐ স্থানে ঈদের সালাত আদায় করা সম্ভব হয়।
সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয় সবাইকে এই বরকতময় দিনগুলোতে বেশি পরিমাণে দুআ, ইস্তেগফার, মহান আল্লাহর দরবারে আরাধনা করার আহ্বান জানিয়েছেন যেন, মহান আল্লাহ খাদেমুল হারামাইন শরীফাইন (দু হারামের সেবক) ও সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সকে হেফাজত করেন, তাদেরকে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করেন এবং তাদেরকে সঠিকভাবে কথা ও কর্ম বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করেন। সেই সাথে আল্লাহ যেন তাদেরকে সৌদি আরব, তার সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ, এ দেশে অবস্থানকারী প্রতিটি বিদেশি নাগরিক, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে তাদের বিশাল মানবিক ও সেবামূলক কার্যক্রমের জন্য উত্তম বিনিময় দান করেন।
তিনি যেন তাঁর মুসলিম বান্দাদের প্রতি এবং বিশ্বের জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষ সকলের উপর দয়া করেন এবং বিশেষ করে আমাদের এই দেশ এবং সমগ্র পৃথিবী থেকে দ্রুত এই মহামারীকে উঠিয়ে নেন।
Sourse: https://www.spa.gov.sa/2075735
▰▰▰▰▰◉◈◉▰▰▰▰▰
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব