চঞ্চল চৌধুরীকে নিয়ে আমাদের মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে যেভাবে পুরো মুসলিম ধর্মকে হেয় করে তুলে ধরা হচ্ছে, এতে করে স্পষ্টতই অনুমেয় ব্যাপারটি নিয়ে অতিরিক্ত কচলানো হচ্ছে।
প্রতিটি মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে এমন ভাবে মুসলিম সমাজ ও আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হচ্ছে যেনো হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা লেগেছে।
মিডিয়ার এই বাড়াবাড়ি খবরগুলো মিডিয়াকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করছে তেমনি আমাদের দেশের হিন্দু মুসলিমের মাঝে বিশাল দেয়াল তৈরিতে সহযোগিতা করছে।
মনে রাখতে হবে এদেশে ধর্ম নিয়ে আলেম সমাজ কখনোই বাড়াবাড়ি করেনা I ধর্মীয় ঠুনকো কারণে কেউ কাউকে পিটিয়ে মারেনা I আমার কাছে অনেক উদাহরণ আছে পাশ্ববর্তী দেশের যেখানে ঠুনকো ধর্মীয় কারণে মুসলিমদের মারা হয়েছে I দুয়েকটা ঘটনা আমাদের দেশে হয়নি তাও অস্বীকার করবোনা I আমাদের দেশে আলেম সমাজের মধ্যে নিজেদের অভ্যন্তরীণ আদর্শ নিয়ে বাড়াবাড়ি আছে সেটাও অস্বীকার করবোনাI
তবে আমি গর্ব করে বলতে পারি , এদেশে অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি রয়েছে পূর্ণ ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ যা পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্তI
রাজনৈতিক কারণে অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন I তবে বাস্তবতা অন্যরকম I
আমি ধর্মীয় উগ্রতাকে প্রচন্ড রকম ঘৃণা করি I এদেশের বিজ্ঞ আলেমরাও একইভাবে উগ্রতাকে ঘৃণা করে I
আলেমদের সাথে মিশে আমি বাস্তবিক ভাবে সেটার প্রমান পেয়েছি I
মনে রাখবেন, এদেশে রামেন্দু মজুমদার, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, গয়েস্বর চন্দ্র রায়, রবীন্দ্রনাথ রায়, রথীন্দ্রনাথ রায় সহ হাজারো হিন্দু প্রখ্যাতজনদের পরিচয় নিয়ে কখনো জানতে চায়নি মুসলিম সমাজ I তাঁদের অবদান নিয়ে গর্ব করে থাকে এদেশের মুসলমানেরা I
কিছু কিছু মানুষ আগ্রহ বসত জানতে চেয়েছিলো চঞ্চল চৌধুরীর ধর্মীয় পরিচয় I আমি মনে করি চঞ্চল চৌধুরী নিজেও জানতেন বা অনুভব করতেন যে মানুষ তাকে মুসলিম হিসেবেই মনে করতো I
এখন তাঁর ধর্ম পরিচয়টা সামনে আসাতে কেউ কেউ হয়তো উৎসাহ নিয়ে জানতে চেয়েছে I তাও জানতে চাওয়া উচিত নয় এবং অন্যান্য ভাষা ব্যবহার করা উচিত নয়, এমনটা আমরাও মনে করি I
ব্যাপারটা নিয়ে মুসলিম সমাজের লোকজনেরাই কিন্তু সোচ্চার হয়ে কথা বলেছে I
কিন্তু প্রতিটি টেলিভিশন ও পত্রিকায় সিরিজ ভাবে এটাকে নিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করার উদ্দেশ্যটা অবাক করেছে আমাকে I এটা নিয়ে সামান্য লেখালেখিতেই সীমাবদ্ধ থাকাটা সমীচীন ছিল I
কিন্তু , মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার এহেন অতিরিক্ত দায়িত্বহীন কান্ডকে অপেশাদারী ও অনাকাঙ্খিত হিসেবেই আমার কাছে মনে হয়েছে I
মুসলিম সমাজের মধ্যে শতকরা ১০ জন মানুষ অবুঝ থাকতে পারে , ঢালাও ভাবে পুরো মুসলিম সমাজকে নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অন্যায় ও অবিবেচনা I
কেউ কেউ ভিন্ন কমেন্ট করেছে , সেটার বিরোধিতা আমিও করেছি I
জেনে অবাক হবেন, অনেক সিনিয়র আলেমরাও নিজেদের অতিভক্ত মানুষগুলোকে পছন্দ করেন না I নিজেদের সমালোচনা নিজেরাও করেন I সেগুলি আমরা কখনো দেখিনা শুনিনা I আমি আলেমদের সাথে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি এদেশে কতবড় বিজ্ঞ অভিজ্ঞ ও উঁচু মানসিকতার আলেম রয়েছেন I তারা আলেম পথে না গিয়ে সাংবাদিকতায় পড়াশুনা করলে আপনার আমার মতো সাংবাদিকের হদিস পাওয়া যেতোনা I
আমাদের দেশ ধর্মীয় বৈষম্যহীন দেশ I এদেশের হিন্দু মুসলিম পাশাপাশি বসে খাওয়া দাওয়া করে এদেশের সব ধর্মের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করে I সুতরাং, তিলকে তাল করে এদেশের হিন্দু মুসলিমের মাঝে সহনশীল ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন নাI
সাইফুর সাগর
সঞ্চালক, ফেস দ্যা পিপল