রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন

নাম পরিবর্তন: ইসলামি সঠিক পদ্ধতি ও করণীয়
রিপোর্টারের নাম / ১৪৮ কত বার
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১
নাম পরিবর্তন: ইসলামি সঠিক পদ্ধতি ও করণীয়
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
◈◈ প্রশ্ন: আমার নামটা ইসলামিক নয়। এখন আমি চাই, ইসলামিক নামে সবাই আমাকে জানুক। কিন্তু আমার সব সার্টিফিকেট, স্মার্ট কার্ড ইত্যাদিতে তো আগের নাম দেয়া আছে এবং সবাই আগের নামেই চিনে। এখন উপায় কি?
উত্তর:
প্রথমত: জানা প্রয়োজন যে, ইসলামের দৃষ্টিতে সুন্দর ও ভালো অর্থবোধক নামের গুরুত্ব রয়েছে। কেননা নাম শুধু পরিচয়ই বহন করে না বরং তা মানুষের ব্যক্তিত্ব, চিন্তা-চেতনা ও রুচি-অভিরুচিরও আয়না স্বরূপ। সুন্দর নাম মন-মানসিকতার উপর প্রভাব ফেলে এবং মন্দ নামেরও কিছু না কিছু প্রভাব ব্যক্তির উপর থাকে। তাই কোন নাম যদি শরিয়া বিরোধী বা খারাপ অর্থ বহন করে তাহলে তা পরিবর্তন করা জরুরি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুন্দর ও মন্দ নাম পরিবর্তন করে দিতেন।
عَنْ عَائِشَةَ، أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ يُغَيِّرُ الاِسْمَ القَبِيحَ
আয়েশা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্দ ও অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিতেন। [সহিহ তিরমিযী-আলবানি, হা/ ২৮৩৯]
সাহাবিদের নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত একাধিক ঘটনা আছে। উদাহরণ:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ: أَنّ ابْنَةً لِعُمَرَ كَانَتْ يُقَالُ لَهَا عَاصِيَةُ فَسَمّاهَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ جَمِيلَةَ
ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, “ওমর রা.-এর এক মেয়ের নাম ছিল আসিয়া (অবাধ্য বা পাপী)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন জামীলা (সুন্দরী)।” [সহিহ মুসলিম, হা/২১৩৯]
এছাড়াও একাধিক সাহাবির নাম পরিবর্ত করার নজির রয়েছে। যেমন: বাররা (নেককার, পূত-পবিত্র) নাম থেকে যয়নব। আরেকজন মহিলা সাহাবির নাম বাররাহ থেকে জুওয়াইরিয়া (ছোট্ট বালিকা), আবু হুরায়রা রা. এর প্রকৃত নাম আবদে শামস (সূর্যদাস) থেকে আব্দুর রহমান (রহমানের দাস), হাযান (শক্ত ভূমি) থেকে সাহল (নরম জমিন) ইত্যাদি। (অবশ্য সর্বশেষ ব্যক্তি বাপ-দাদার দেয়া নাম পরিবর্তন করতে রাজি হয় নি)।
সুতরাং আপনার নামটা অনৈসলামিক, অসুন্দর বা খারাপ অর্থবোধক হলে করণীয় হল, আপনি নিজের জন্য সুন্দর অর্থবোধক একটি ইসলামি পছন্দ করবেন। তারপর এখন থেকে ঐ নামে নিজের পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি অন্যদেরকে সেই নামটা বলার জন্য বলবেন এবং আগের নামে ডাকতে নিষেধ করবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে নাম পরিবর্তনের জন্য নতুন করে আকিকা দিতে হবে বা বিশেষ কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
সেই সাথে দেশের আইন মোতাবেক কোর্টে এফিডেভিট (হলফনামা) এর মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, সার্টিফিকেট ইত্যাদি সরকারি ডকুমেন্টস এ নাম পরিবর্তন করতে পারবেন। নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আইনগতভাবে কী করণীয় তা জানার জন্য আপনি একজন আইনজীবী, জন্মনিবন্ধন অফিস বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করুন।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
◈◈ প্রশ্ন: আকিকার সাথে শিশুর নাম রাখার কোন সম্পর্ক আছে কি? আমি এখন বড় হয়েছি। এখন আমার নাম পরিবর্তন করতে চাই। এ ক্ষেত্রে করণীয় কি?
উত্তর:
সুন্নত হল, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ৭ম দিনের দিন আকিকা করা, মাথার চুল ফেলা এবং সুন্দর একটা নাম রাখা। তবে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিনই নাম রাখা যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সন্তান ইবরাহীম এর নাম রেখেছিলেন যে রাতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল সে রাতেই।
যাহোক, যখনই নাম রাখা হোক না কেন নামের অর্থ যদি শরিয়া পরিপন্থী হয় বা এর চেয়ে ভালো কোন নাম পছন্দ হয় তাহলে জীবনের যে কোন সময় তা পরিবর্তন করে ভালো ও সুন্দর অর্থ বোধক নাম রাখা জায়েজ আছে। হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক সাহাবির নাম পরিবর্তন করেছেন।
নাম পরিবর্তন করার জন্য কোন ধরণের আনুষ্ঠানিকতা তথা মিলাদ মাহফিল, লোকজনকে খাওয়ানো, দুআ-মুনাজাত, পুনরায় আকিকা ইত্যাদির কোন কিছুর প্রয়োজন নাই। যখনই নামের মধ্যে ভুল পরিলক্ষিত হবে তখনই তা পরিবর্তন করা যাবে।
আর দেশেও নাম পরিবর্তন করা সংক্রান্ত আইন আছে। সে আইন অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধন, ন্যাশনাল আইডি, পাসপোর্ট ইত্যাদিতে নাম পরিবর্তন করতে পারবেন।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর..
জনপ্রিয় পোস্ট
সর্বশেষ আপডেট