রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২৮ অপরাহ্ন

রিয়া: পরিচয় ও ভয়াবহতা
রিপোর্টারের নাম / ২২২ কত বার
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১
রিয়া: পরিচয় ও ভয়াবহতা
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
প্রশ্ন: রিয়া কি?
– গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে অনেক নাফরমানি মূলক কাজ হয়। তারপরেও আমরা দাওয়াত দাতাকে খুশি করার জন্য সেখানে যাই। এটা কি রিয়া?
– মহিলাদের মুখখোলা রেখে সাজগোজ করে বাইরে যাওয়াটা কি রিয়া?
– আজকাল সমাজে বেশির ভাগ মানুষ, “সে নিজে খুব ভাল “সেটা প্রমাণ করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।এই আমিত্বকে নিয়ে বড়াই করাটাও কি রিয়া?
উত্তর:
নিম্নে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া হল:
❑ রিয়া কি?
রিয়া (الرياء) অর্থ: লোক দেখানো, প্রদর্শন করা বা প্রদর্শনেচ্ছা।
ইসলামের পরিভাষায়, মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে কোন আমল সম্পাদন করাকে রিয়া বলা হয়। অন্য কথায়, আল্লাহর জন্য করণীয় ইবাদত পালনের মধ্যে মানুষের দর্শন, প্রশংসা বা বাহবার ইচ্ছা পোষণ করাকে রিয়া বলে।
অর্থাৎ যখন কোন মানুষ নামায, রোযা, দান-সদকা, কুরআন তিলাওয়াত বা দ্বীনের কোনও কাজ করবে এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তার প্রশংসা করবে, মানুষ জানবে যে, সে দ্বীনদার, নামাযী, সৎকর্ম শীল, সবাই তাকে দানশীল বলবে, সমাজে সে ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত হবে, মানুষ তাকে বাহবা দিবে, তার নামে মিছিল-শ্লোগান দিবে… তাহলে তখন এ আমলটি রিয়া হিসেবে পরিগণিত হবে।
❑ রিয়ার ভয়াবহতা:
রিয়া হল, ছোট শিরক। এর মাধ্যমে মানুষের আখিরাতের প্রতিদান ধ্বংস হয়। হাদিসে এর ভয়াবহতা কথা উল্লেখিত হয়েছে এভাবে:
মাহমুদ ইবনে লাবীদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالُوا وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الرِّيَاءُ يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمْ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً
‘‘আমি সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি তোমাদের ব্যাপারে ভয় পাই তা হল, শিরক আসগর বা ক্ষুদ্রতর শিরক। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন: হে আল্লাহর রাসুল, শিরক আসগর কী? তিনি বলেন: রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা। কিয়ামতের দিন যখন মানুষদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে তখন মহান আল্লাহ এদেরকে বলবেন, তোমরা যাদের দেখাতে তাদের নিকট যাও, দেখ তাদের কাছে তোমাদের পুরস্কার পাও কি না!’’ (আহমদ, আল-মুসনাদ ৫/৪২৮-৪২৯; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১০২। হাদিসটি সহীহ)
◍ আরেকটি হাদিস:
আবু সাইদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أَلا أُخْبِرُكُمْ بِمَا هُوَ أَخْوَفُ عَلَيْكُمْ عِنْدِي مِنْ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ قَالَ قُلْنَا بَلَى فَقَالَ الشِّرْكُ الْخَفِيُّ أَنْ يَقُومَ الرَّجُلُ يُصَلِّي فَيُزَيِّنُ صَلاتَهُ لِمَا يَرَى مِنْ نَظَرِ رَجُلٍ
‘‘দজ্জালের চেয়েও যে বিষয় আমি তোমাদের জন্য বেশি ভয় পাই সে বিষয়টি কি তোমাদেরকে বলব না? আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই বলুন। তিনি বলেন, বিষয়টি গোপন শিরক। গোপন শিরক এই যে, একজন সালাতে দাঁড়াবে এরপর যখন দেখবে যে মানুষ তার দিকে তাকাচ্ছে তখন সে সালাত সুন্দর করবে।” [ইবনে মাজাহ, আস-সুনান ২/১৪০৬ (কিতাবুয যুহুদ, বাবুর রিয়া ওয়াস সুমআহ); আলবানি, সহীহুত তারগীব ১/৮৯। হাদিসটি হাসান।]
▪ যদি জানা যায় যে, গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ, বেহায়াপনা, গান-বাদ্য ও অন্যান্য হিন্দুয়ানী কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে তাহলে তাতে শরীক হওয়া জায়েজ নাই। দাওয়াত দাতাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে তাতে শরীক হওয়া ‘স্রষ্টাকে অসন্তুষ্ট করে সৃষ্টিকে খুশি করার চেষ্টা’ হিসেবে পরিগণিত হবে। অথচ এটা হারাম।
▪ সাজগোজ করে বেপর্দা অবস্থায় মহিলাদের বাইরে যাওয়াটা আল্লাহর নাফরমানী এবং কুরআনের বিধানের লঙ্ঘন।
▪নিজের আমিত্বকে প্রকাশ করার প্রতিযোগিতা করা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে এটি অত্যন্ত ঘৃণিত চরিত্র ও গুনাহের কাজ।
উপরোক্ত কাজগুলো সবই আল্লাহর নাফরমানী মূলক কাজ। এ সব কর্মের মাধ্যমে মানুষ গুনাহগার হবে। কিন্তু সেগুলোকে রিয়া বলা যাবে না। বরং রিয়া হল, ইবাদত বন্দেগী বা দ্বীনের কাজকে মানুষকে দেখানো বা দুনিয়ার স্বার্থে সম্পাদন করা-যেমনটি আমরা আগে উল্লেখ করেছি। আশা করি বিষয়টি ক্লিয়ার হয়েছে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর..
জনপ্রিয় পোস্ট
সর্বশেষ আপডেট