রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

মসজিদে হারামে সালাত আদায়ের মর্যাদা এবং এ সংক্রান্ত সংশয় নিরসন
রিপোর্টারের নাম / ১৯৩ কত বার
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০২১
মসজিদে হারামে সালাত আদায়ের মর্যাদা এবং এ সংক্রান্ত সংশয় নিরসন
▬▬▬🕋▬▬▬
প্রশ্ন: মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামাজ এক লক্ষ রাকাতের সমান। এটা কি ফরজ, সুন্নত, নফল যে কোন নামাজ? এছাড়া রোজা, দান-সদকা, দুআ-জিকির, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদতের সওয়াবও কি এক লক্ষ গুণ?
উত্তর:
জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
صَلَاةٌ فِىْ مَسْجِدِىْ أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيْمَا سِوَاهُ إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ وَصَلَاةٌ فِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ أَفْضَلُ مِنْ مِائَةِ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيْمَا سِوَاهُ
“আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) সালাত আদায় করা মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের চেয়ে এক হাজার সালাতের চেয়েও উত্তম। আর মসজিদে হারামে সালাত আদায় করার সওয়াব অন্যান্য মসজিদের চেয়ে এক লক্ষ গুণ বেশী।” [সহিহ ইবনে মাজাহ, হা/১১৬৩-আলবানি, মুসনাদে আহমদ, হা/১৪৬৯৪-সোর্স dorar]
অত্র হাদিসে যেহেতু আম ভাবে সালাতের কথা বলা হয়েছে সেহেতু তা সর্বপ্রকার সালাতকে শামিল করবে। যেমন: ফরজ, সুন্নত, নফল, সালাতুয যুহা (সালাতুল আওয়াবীন/চাশতের সালাত), তাহিয়াতুল মসজিদ (দুখুলুল মসজিদ), সালাতুত তওবা, সালাতুল ইস্তিখারা, তারাবিহ, তাহাজ্জুদ, ঈদ, জানাজা ইত্যাদি। কিন্তু সালাত ব্যতিরেকে অন্যান্য ইবাদত তথা সওম, জিকির-আজকার, দুআ-তাসবিহ ইস্তিগফার, দান-সদকা, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা হাদিসে কেবল সালাতের কথা এসেছে; অন্য কোনও ইবাদত নয়। অন্যান্য ইবাদতের অতিরিক্ত মর্যাদা প্রমাণ করতে হলে তারা পক্ষে বিশুদ্ধ হাদিস থাকা অপরিহার্য কিন্তু এ ব্যাপারে কোনও বিশুদ্ধ হাদিস নাই।
এটাই জুমহুর বা সংখ্যা গরিষ্ঠ আলেমদের অভিমত।
❑ মসজিদে হারামে সালাত ছাড়া অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে সালাতের অনুরূপ এক লক্ষগুণ সওয়াব প্রাপ্তির হাদিস বানোয়াট:
কতিপয় আলেম (যেমন: হাসান বসরি রহ.) এর মতে মসজিদে হারামে সালাতের অনুরূপ অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে যে হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেছেন তা মুহাদ্দিসদের অনুসন্ধানে বানোয়াট বা ভিত্তিহীন। যেমন:
روى ابنُ ماجَهْ عن ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما قال: قال رسولُ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم: ((من أدرك رمضانَ بمكَّةَ فصام وقام منه ما تيسَّرَ له، كَتَب اللهُ له مئةَ ألفِ شَهرِ رمَضانَ فيما سِواه…)) (أخرجه ابنُ ماجه 3117، وفي إسناده عبد الرحيم بن زيد العَمي: متروكُ الحديثِ).
قال الألباني في (الضعيفة 2/232): “الحديثُ موضوعٌ”.
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি মক্কায় রমজান পায় অত:পর সিয়াম পালন করে এবং যতটুকু সম্ভব কিয়াম করে (তারাবিহ পড়ে) আল্লাহ তার জন্য অন্যান্য রমজানের চেয়ে একলক্ষ বেশি সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন।”
[সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৩১১৭।] এ হাদিসের সনদে আব্দুর রহিম বিন যায়েদ আল আ’মি নামক বর্ণনাকারী মাতরূক (পরিত্যাজ্য)। শাইখ আলবানি বলেন, এটি মউযু (বানোয়াট)। [দ্রষ্টব্য: সিলসিলা যাইফাহ ২/২৩২]
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে,
شهرُ رمضانَ في مسجدي هذا أفضلُ من ألفِ شهرِ رمضانَ فيما سواه إلا المسجدَ الحرامَ
“আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববীতে) এক রমজান মাস মসজিদে হারাম ছাড়া এক হাজার রমজান থেকে শ্রেষ্ঠ।” শাইখ আলাবনি এ সম্পর্কে বলেন, ضعيف جداً “অত্যন্ত দুর্বল।” [যাইফুত তারগিব, হা/৭৬০]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◯◍◯▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর..
জনপ্রিয় পোস্ট
সর্বশেষ আপডেট