সমকামিতা সমর্থনকারী কি কাফের?
প্রশ্ন: মুসলিম হবার পরেও যদি কেউ সমকামিতা কে সমর্থন করে, তাহলে সে কি কাফির/মুনাফিক কিংবা ইসলাম বহির্ভূত লোকদের অন্তর্গত হবে?
উত্তর:
ইসলামে সমকামিতা (homosexuality) তথা পুরুষের সাথে পুরুষ অথবা নারীর সাথে নারীর যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, কবিরা গুনাহ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হাদিসে এটিকে অভিশাপ যোগ্য কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি জিনার থেকেও নিকৃষ্ট। কেননা তা প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌনাচার এবং মানবতা বিধ্বংসী আচরণ।
◯ বিস্তারিত পড়ুন:
সমকামিতা: ভয়াবহতা, শাস্তি ও পরিত্রাণের উপায়
আর কেউ যদি আল্লাহর হারাম কৃত বিধানকে হারাম মনে না করে অথবা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তাকে হালাল মনে করে বা আল্লাহ যা হালাল করেছেন তাকে হারাম মনে করে তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে কোনও দ্বিমত নাই বরং সকল মাজহাবের আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত।
قال الإمام الشيخ العلامة عبد الله بن باز رحمه الله:
قد أجمع علماء الإسلام على كفر من استحل ما حرمه الله أو حرم ما أحله الله مما هو معلوم من الدين بالضرورة، ومن تأمل كلام العلماء في جميع المذاهب الأربعة في باب حكم المرتد اتضح له ما ذكرنا.
(مجموع الفتاوى للشويعر 2/ 330)
◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَٰذَا حَلَالٌ وَهَٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ
“তোমাদের মুখ থেকে সাধারণত: যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে তেমনি করে তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বল না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তাদের মঙ্গল হবে না।” [সূরা নাহল: ১১৬]
◈ তিনি আরও বলেন,
قُلْ أَرَأَيْتُم مَّا أَنزَلَ اللَّهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُم مِّنْهُ حَرَامًا وَحَلَالًا قُلْ آللَّهُ أَذِنَ لَكُمْ ۖ أَمْ عَلَى اللَّهِ تَفْتَرُونَ
“বল, আচ্ছা নিজেই লক্ষ্য করে দেখ, যা কিছু আল্লাহ তোমাদের জন্য রিজিক হিসাবে অবতীর্ণ করেছেন, তোমরা সেগুলোর মধ্য থেকে কোনটাকে হারাম আর কোনটাকে হালাল সাব্যস্ত করেছ? বল, তোমাদের কি আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, নাকি আল্লাহর উপর অপবাদ আরোপ করছ?” [সূরা ইউনুস: ৫৯]
আল্লাহর হারাম-হালাল কৃত বিধানের বিপরীতে শাসক, আলেম-ওলামা, পীর-বুজুর্গ ইত্যাদির কথা অনুসরণ করা তাদের ইবাদতের শামিল।
◈ যখন আদি বিন হাতিম আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করতে শুনলেন:
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ
“তারা তাদের পণ্ডিত (পাদ্রী) ও সন্ন্যাসীদের তাদের পালনকর্তা রূপে গ্রহণ করেছে আল্লাহ ব্যতীত।” [সূরা তওবা: ৩১] তখন বললেন যে, তারা তো তাদের ইবাদত করে নি। প্রতিদত্তরে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«إنهم حرموا عليهم الحلال، وأحلوا لهم الحرام فاتبعوهم فذلك عبادتهم»
” এরা (এসকল পাদ্রী-সন্ন্যাসীরা) হালালকে তাদের জন্য হারাম করেছে আর হারামকে হালাল করেছেন। আর তারা তাদের কথার অনুসরণ করেছে। এটাই তাদের ইবাদত।” [সহিহ তিরমিযি, হা/৩০৯৫-আলবানি]
সুতরাং কোনও মুসলিম যদি সমকামিতার ব্যাপারে ইসলামের বিধান জানার পরও তাকে সমর্থন করে, (সমর্থন করার অর্থ হল, তাকে হারাম মনে না করা বা হালাল মনে করা), বা এ সংক্রান্ত আল্লাহর বিধানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, এর বিরোধিতা করে অথবা আল্লাহর এ বিধানকে ‘বর্তমান আধুনিক যুগের জন্য প্রযোজ্য নয়’ বলে মনে করে তাহলে সে কাফির-মুরতাদ বা ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত বলে গণ্য হবে।
আর ইসলামের ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী মুরতাদের শাস্তি হল, মৃত্যুদণ্ড-যদি সে তওবা করতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু তওবা করলে তাকে দুনিয়াবি শাস্তি থেকে যেমন অব্যাহতি দেয়া হবে মহান আল্লাহও তাকে ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায়। নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
আল্লাহু আলাম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল