প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
পারিবারিক পরিচিতি[সম্পাদনা]
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সাতক্ষীরা সদর থানার বুলারাটি গ্রামে ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা
মাওলানা আহমাদ আলী (১৮৮৩-১৯৭৬) বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন খ্যাতনামা আহলেহাদীছ আলেম ছিলেন। তাঁর বড় ভাই আব্দুল্লাহিল বাকী ছিলেন
মুসলিম লীগের বিশিষ্ট নেতা এবং ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। তাঁর বংশ পরিক্রমা- আসাদুল্লাহ আল-গালিব বিন আহমাদ আলী বিন মুনশী যীনাতুল্লাহ বিন আলহাজ্জ যমীরুদ্দীন বিন রফী মাহমূহ বিন আব্দুল হালীম বিন উযির আলী মণ্ডল বিন মাওলানা সৈয়দ শাহ নযীর আলী আল-মাগরেবী। তাঁর উর্ধ্বতন ৭ম পুরুষ সৈয়দ শাহ নাযীর আলী আল-মাগরেবী (রহ.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মরক্কো থেকে এদেশে আগমণ করেন এবং পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলাধীন বারাসাত মহকুমায় বিবাহ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৪ সন্তানের জনক। তাঁর সহধর্মীনী তাহেরুন্নেছা
খান বাহাদুর মোবারক আলী (
খান বাহাদুর আহছানউল্লাহর ভ্রাতা)-এর প্রোপৌত্রী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর।
তিনি
সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং
জামালপুরের আরামনগর কামিল মাদরাসা থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। তৎকালীন
পূর্ব পাকিস্তানমাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষার সম্মিলিত মেধা তালিকায় তার অবস্থান ছিল যথাক্রমে ১৬তম এবং ৫ম। পরবর্তীতে তিনি কলারোয়া সরকারী কলেজ, সাতক্ষীরা থেকে আইএ এবং সরকারী মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ,
খুলনা থেকে বিএ পরীক্ষাতেও কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। অত:পর ১৯৭৬ সালে তিনি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৮৫ সালে তিনি ইংল্যাণ্ডে পিএইচডি গবেষণার জন্য
কমনওয়েলথ স্কলারশীপ লাভ করেছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত গমন করেননি। ১৯৯২ সালে তিনি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। মাতৃভাষা বাংলাসহ আরবী, ইংরেজী, উর্দূ এবং ফার্সী ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে।
[২]
প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ও সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ[সম্পাদনা]
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ[সম্পাদনা]
তিনি ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় নিয়মিত সম্পাদকীয় লেখা ছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি এমফিল, পিএইচডিসহ একাডেমিক গবেষণাকর্মসমূহ তত্ত্বাবধান ও নিরীক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতোমধ্যে তাঁর রচিত ও অনুদিত প্রায় চল্লিশটি গ্রন্থ ও পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে।
[৩][৪]
- তাফসীরুল কুরআন- ৩০তম পারা (২০১৩)
- ছালাতুর রাসূল [বাংলা] (১৯৯৮)
- ছালাতুর রাসূল [ইংরেজী] (২০১০)
- জিহাদ ও ক্বিতাল (২০১৩)
- মীলাদ প্রসঙ্গ (১৯৮৬)
- শবেবরাত (১৯৯০)
- বিদ‘আত হতে সাবধান [আরবী হতে অণুদিত] (২০১২)
- হজ্জ ও ওমরা (২০০১)
- আক্বীদা ইসলামিয়াহ (২০০০)
- হাদীছের প্রামাণিকতা (২০০৪)
- মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা (১৯৮৭)
- তালাক ও তাহলীল (২০০১)
- আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয় (২০০৪)
- নয়টি প্রশ্নের উত্তর [আরবী হতে অণুদিত] (২০১০)
- ছবি ও মূর্তি (২০১০)
- আহলেহাদীছ আন্দোলন: উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ [ডক্টরেট থিসিস] (১৯৯৬)
- আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন? (বাংলা) (১৯৭৯)।
- আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন? (ইংরেজী) (২০১২)।[৫]
- ফিরক্বা নাজিয়াহ (২০১৩)
- জীবন দর্শন (২০১৩)
- দিক দর্শন (২০১৬)
- ইনসানে কামেল (২০০৯)
- উদাত্ত আহ্বান (১৯৯৩)
- নৈতিক ভিত্তি ও প্রস্তাবনা (১৯৯৩)
- ইক্বামতে দ্বীন : পথ ও পদ্ধতি (২০০৪)
- সমাজ বিপ্লবের ধারা (১৯৮৬)
- তিনটি মতবাদ (১৯৮৭)
- দাওয়াত ও জিহাদ (১৯৯৩)
- সালাফী দাওয়াতের মূলনীতি [ আরবী হতে অণুদিত] (১৯৮৫)
- ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব্ব [ আরবী হতে অণুদিত] (১৯৯১)
- আরব বিশ্বে ইসরাঈলী আগ্রাসনের নীল নকশা (ইংরেজী হতে অণুদিত) (১৯৮৭)
- ইসলামী খেলাফত ও নেতৃত্ব নির্বাচন (২০০৩)
- ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (২০০৩)
- নবীদের কাহিনী-১ (২০১০)
- নবীদের কাহিনী-২ (২০১০)
- সীরাতুর রাসূল (ছা.) (নবীদের কাহিনী-৩) (২০১৫)
- আরবী ক্বায়েদা (১৯৯৮)
- প্রাথমিক বাংলা শিক্ষা
বাংলাদেশের বুকে ইসলামের বিশুদ্ধ দাওয়াত প্রসারের ক্ষেত্রে
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের অবদান অসামান্য। ৫০ ও ৬০-এর দশকে এ দেশে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অন্যতম দিকপাল আল্লামা
আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে যে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংগঠনিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন, সে আন্দোলনকে আরো সুপ্রতিজ্ঞ ও সুসংহত করে তুলেছেন মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। গোষ্ঠীগত গণ্ডির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি আহলেহাদীছকে একটি ব্যাপকভিত্তিক ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলনে রূপদানের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
[৬] তিনি তাঁর বক্তব্য ও লেখনীর মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, মানবরচিত যাবতীয় মতবাদ পরিত্যাগ করে একমাত্র অহির বিধানের প্রতি নি:শর্ত আত্মসমর্পণের মধ্যেই মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তি নিহিত। যা তিনি শ্লোগান আকারে তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “সকল বিধান বাতিল কর, অহির বিধান কায়েম কর”। মুসলিম সমাজে প্রচলিত শিরক-বিদআত এবং মারেফত/তরীকতের নামে প্রচলিত ইসলামবিরোধী আক্বীদা-আমলের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা সোচ্চার। তিনি মুসলিম উম্মাহকে মাযহাবভিত্তিক বিভক্তি থেকে বেরিয়ে এসে একমাত্র পবিত্র
কুরআন ও
ছহীহ হাদীছের কাছে আত্মসমার্পণের উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন,”আসুন, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি”।
[৭] তিনি প্রচলিত সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন কামনা করেন এবং প্রত্যাশা করেন এমন একটি ইসলামী সমাজ, যেখানে থাকবেনা
প্রগতির নামে কোন বিজাতিয় মতবাদ; থাকবে না ইসলামের নামে কোনরূপ মাযহাবী সংকীর্ণতাবাদ। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্র ও সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচলিত
গণতন্ত্র তথা ব্যালটের রাজনীতি এবং জঙ্গীবাদ তথা বুলেটের রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য; বরং মানুষের আক্বীদা-আমলের সংস্কারের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধনের মাধ্যমেই ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এটাই তাঁর মতে ইক্বামতে দ্বীনের নবুয়তী পদ্ধতি। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে “ইমারত ও বায়আত” ভিত্তিক সংঘবদ্ধ আন্দোলনকে তিনি বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে আবশ্যক মনে করেন।
[৮][৯] [১০]
২০০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি জঙ্গীবাদের সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হন। একই দিনে ১০টি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনি তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবী করেন। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর অবশেষে ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট তিনি মুক্তিলাভ করেন। পরবর্তীতে সকল মামলায় তিনি বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত হন।
[১১][১২][১৩]