যে ৮টি আমলের কারণে ফেরেশতা মণ্ডলী মানুষের জন্য দুআ করে
যে ৮টি আমলের কারণে ফেরেশতা মণ্ডলী মানুষের জন্য দুআ করে:
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
নি:সন্দেহে ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে মানুষের দুআ পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা নিষ্পাপ ও পূত-পবিত্র। তারা কখনও আল্লাহর অবাধ্যতা করে না। সুতরাং তাদের দুআ কবুলের সম্ভাবনা খুব বেশি।
● সহিহ বুখারির ভাষ্যকার ইবনে বাত্তাল বলেন,
” ومعلوم أن دعاء الملائكة مجاب ” انتهى من ” شرح صحيح البخارى ” (3/ 439)
“এটা জানা কথা যে, ফেরেশতাদের দুআ কবুল হয়।” (শারহু সহিহিল বুখারি ৩/৪৩৯)
● সিন্ধি বলেন,
” دُعَاءُ الْمَلَائِكَةِ يُرْجَى اسْتِجَابَتُهُ ” انتهى من ” حاشية السندي على سنن ابن ماجه ” (2/ 224) .
”ফেরেশতাদের দুআ কবুলের আশা করা যায়।” (ইবনে মাজাহ এর পাদটীকা হাশিয়াতুস সিন্দী ২/২২৪)
● মোবারক পুরী মিশকাতুল মাসাবিহ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন,
” دعاء الملائكة مستجاب ” انتهى من ” مرعاة المفاتيح ” (5/ 309)
”ফেরেশতাদের দুআ কবুল হয়।” (মিরআতুল মাফাহিত শরহু মিশকাতুল মাসাবিহ ৫/৩০৯)
সুতরাং আমাদের জানা দরকার যে, কোন কোন আমল করলে ফেরেশতা মণ্ডলী আমাদের জন্য দুআ করবে। এ মর্মে বেশ কিছু আমল বর্ণিত হয়েছে। সে গুলো থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ৮টি আমল নিম্নে উপস্থাপন করা হল:
◈ ১) মানুষকে দীনের জ্ঞান ও কল্যাণকর বিষয় শিক্ষা দান করা:
আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلائِكَتَهُ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا، وَحَتَّى الْحُوتَ فِي الْبَحْرِ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ”
“নিশ্চয় আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতা মণ্ডলী এমন কি গর্তের পিপীলিকা এবং সাগরের মাছ ঐ ব্যক্তির জন্য রহমত ও মাগফেরাতের দুয়া করে যে মানুষকে কল্যাণকর বিষয় (তথা দীনের জ্ঞান) শিক্ষা প্রদান করেন।” (তিরমিযী, হাদিস নং ২৬০৯, তিনি বলেন হাদিসটি হাসান গরীব। শাইখ আলবানি বলেন, হাসান। দ্রষ্টব্য: সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব)
◈ ২) জামায়াতের ১ম কাতারে সালাত আদায় করা:
বারা ইবনে আযিব রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি:
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصَّفِّ الْأَوَّلِ
“নিশ্চয় আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতা মণ্ডলী রহমতের দুয়া করেন প্রথম কাতারে সালাত আদায়কারীদের জন্য।” (সুনান ইবনে মাজাহ, অনুচ্ছেদ: প্রথম কাতারে মর্যাদা, হাদিস নং ৯৮৭, সনদ হাসান-আলবানী, দ্রষ্টব্য: সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব ১/১১৮)
◈ ৩) কাতারে ডান দিকে সালাত আদায় করা:
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى مَيَامِنِ الصُّفُوفِ
“নিশ্চয় আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতা মণ্ডলী রহমতের দুয়া করেন ঐ সকল লোকের জন্য যারা কাতারের ডান পাশে সালাত আদায় করে।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৫৭৮, সনদ হাসান-আলবানী)
◈ ৪) কাতারের সাথে মিলে ফাঁকা জায়গা পূরণ করা:
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ الله عَزَّ وَجَلَّ وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الَّذِينَ يَصِلُونَ الصُّفُوفَ وَمَنْ سَدَّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً
“নিশ্চয় আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতা মণ্ডলী রহমতের দুয়া করেন ঐ সকল লোকের প্রতি যারা কাতারের সাথে মিলিত হয়ে সালাত আদায় করে এবং যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করে আল্লাহ তায়ালা এর কারণে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।” (সুনান ইবনে মাজাহ, অনুচ্ছেদ, কাতার সোজা করা, হাদিস নং ৯৮৫। সনদ হাসান-আলবানী। দ্রষ্টব্য: সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব ১/১২১)
◈ ৫) নামাযের স্থানে বসে থাকা:
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لا تَزَالُ الْمَلائِكَةُ تُصَلِّي عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مَسْجِدِهِ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، مَا لَمْ يُحْدِثْ
“তোমাদের কোন ব্যক্তি যতক্ষণ মসজিদের ভেতরে (অন্য বর্ণনায়, তার নামাজের স্থানে) অবস্থান করতে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতা মণ্ডলী তার জন্য এ বলে দুয়া করতে থাকে যে, হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করে দাও, তার প্রতি রহম কর। তার ওযু না ছুটে যাওয়া পর্যন্ত তারা তার জন্য এভাবে দুয়া করতে থাকে।”
হাজরা মাউতে এক লোক এ হাদিস শুনে আবু হুরায়রা রা. কে জিজ্ঞেস করল, হে আবু হুরায়রা, ওযু ছুটার অর্থ কী? তিনি বললেন, আল্লাহ সত্যের ব্যাপারে লজ্জা করেন না। ওযু ছুটে যাওয়া মানে বায়ু বের হওয়া। [আল মুজামুল কাবীর (আল জুযউল মাফকূদ) তবরানী, হাদিস নং ১৪, শামেলা]
◈ ৬) রোযার জন্য সেহেরী খাওয়া:
আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
السَّحُورُ أَكْلُهُ بَرَكَةٌ، فَلَا تَدَعُوهُ، وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ، فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ
“সেহেরী খাওয়া বরকতের বিষয়। অত:এব তোমরা তা পরিত্যাগ করিও না। এমনকি এক ঢোক পানি পান করে হলেও। কারণ আল্লাহ তায়ালা যারা সেহেরী খায় তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতা মণ্ডলীও তাদের জন্য দুয়া করেন।” (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং ১১৮৭, শামেলা। হাসান লি গাইরেহী, দেখুন: সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/২৫৮)
◈ ৭) রোগীর সেবা-যত্ন করা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
” مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مُسْلِمًا إِلَّا ابْتَعَثَ اللهُ لَهُ سَبْعِينَ أَلْفَ مَلَكٍ يُصَلُّونَ عَلَيْهِ أَيَّ سَاعَةٍ مِنَ النَّهَارِ كَانَتْ حَتَّى يُمْسِيَ، وَأَيَّ سَاعَةٍ مِنَ اللَّيْلِ كَانَتْ حَتَّى يُصْبِحَ “
“কোন মুসলিম যদি অন্য কোন মুসলিম রোগীর সেবা-যত্ন করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার নিকট সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রেরণ করেন যারা তার জন্য দুয়া করতে থাকে। সে ব্যক্তি দিনের যে কোন সময় রোগীর পরিচর্যা করতে যাক না কেন সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরেশতা মণ্ডলী তার জন্য দুয়া করে অনুরূপভাবে রাতের যে কোন সময় রোগীর পরিচর্যা করতে যাক না কেন সকাল পর্যন্ত তারা তার জন্য দুয়া করতে থাকে।”
(হাকেম ও ইবনে হিব্বান মারফূ সূত্রে। সহীহ, শাইখ আলবানী- দেখুন: সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব ৩/১৯৭)
◈ ৮) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরূদ পেশ করা:
عَبْدِ اللهِ بْنِ عَامِرِ بْنِ رَبِيعَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ عَلَى الْمِنْبَر: مَا مِنْ عَبْدٍ يُصَلِّي عَلَيَّ صَلاةً إِلا صَلَّتْ عَلَيْهِ الْمَلائِكَةُ ، مَا دَامَ يُصَلِّي عَلَيَّ ، فَلْيُقِلَّ ذَلِكَ أَوْ لِيُكْثِرْ
আব্দুল্লাহ বিন আমের বিন রাবিয়া তার পিতা (আমের) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মিম্বারে বক্তব্য দিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরুদ পেশ করবে ফেরেশতা মণ্ডলী তার জন্য দুয়া করবে। তারা ততক্ষণ পর্যন্ত দুয়া করতে থাকবে যতক্ষণ সে দরুদ পেশ করতে থাকে। সুতরাং কম হোক বেশী হোক যা ইচ্ছা সে দরুদ পেশ করতে পারে।” (মুসনাদ তায়ালুসী, হাদিস নং ১২২৫, হাসান, আলবানী। দেখুন: সহীহুল জামে হাদিস নং ৫৭৪৪)
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে উপরোক্ত নেক কাজ সমূহ করার মাধ্যমে ফেরেশতা মণ্ডলীর দোয়ার ভাগীদার হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
গ্রন্থনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।