রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন

মাতৃভাষা এবং একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা:
কাজী আসাদ বিন রমজান / ৬৩১ কত বার
আপডেট: সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মাতৃভাষা এবং একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা:
▬▬▬❖❖❖▬▬▬
বাংলা আমার মায়ের ভাষা।
বাংলা আমার প্রাণের ভাষা।
বাংলা আমার ভালবাসা।

ফেব্রুয়ারি এলে বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের ভালবাসা উপচে পড়ে! ভালো কথা। বর্তমানে বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালিতও হচ্ছে। কিন্তু আমরা নিজেরা নিজেদের ভাষার প্রতি কতটুকু আন্তরিক? আমরা কি সত্যিকারভাবে এ ভাষার প্রতি ভালবাসার প্রমাণ দিতে পেরেছি?

বাস্তবতা বলছে, ভিন্ন কথা।

➤ ২১ ফেব্রুয়ারি আসলে দেখা যায়, ভাষা প্রীতিতে আমাদের শিক্ষিত সমাজ গদগদ করে। কিন্তু তারাই বাংলা বলার ফাঁকে ফাঁকে দু চারটা ইংরেজি শব্দ বা বাক্য বলাকে মনে করে ‘স্মার্টনেস”। কেউ কথার ফাঁকে ফাঁকে ইংরেজি কপচাতে না পারলে তাকে মনে করা হয় সেকেলে-খ্যাত!
এটাই কি আমাদের বাংলা ভাষা প্রীতির পরিচয়?!

➤ দু:খ জনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের সংবিধানে ৩নং অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলার কথা বলা থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ না আছে উচ্চশিক্ষায়, না উচ্চ আদালতে। এখনও বাংলাদেশের কোর্টে বাংলায় রায় দেয়া হয় না। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো অনেক বিষয় ইংরেজিতেই পড়ানো হয়।
➤ আমাদের আলেম সমাজ এখনও বাংলা ভাষার প্রতি অতটা যত্নশীল নয়। কোন কোন কওমি মাদরাসায় কতিপয় শিক্ষক এখনও কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা উর্দু ভাষায় দিয়ে থাকেন! তাদের মুখ দিয়ে বাংলা বের হতে কষ্ট হয়!

নবী-রসূলগণ তাদের স্বজাতির লোকদের কাছে ইসলামের দাওয়াত কি ভিনদেশীয় ভাষায় পেশ করেছিলেন?
আল্লাহ তায়ালা কেন প্রত্যেক জাতির মাতৃভাষায় আসমানি কিতাব ও নবী-রসূল প্রেরণ করেছিলেন? আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ
“আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে।” (সূরা ইবরাহীম: ৪)

তাহলে আলেম সমাজের এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন নয় কি?

➤ তথাকথিত ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের বাংলার অবস্থা দেখলে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়।
➤ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠানের এক পৃষ্ঠার একটি ঘোষণাপত্রে যখন ভুলের ছড়াছড়ি দেখি তখন আর কিছু বলার থাকে না।

➤ রাজধানীর দোকানপাট, প্রতিষ্ঠান-ভবনের সাইনবোর্ডগুলোর দিকে তাকালেই বাংলা ভাষার করুণ অবস্থা বোঝা যায়। রাতের নগরে রঙিন আলোর লেখায় সাইনবোর্ড, দেওয়াললিখনে একটু মনোযোগ দিলেই ভড়কে যেতে হয় হাজারো ভুল বানান দেখে।
➤ ফেসবুকে শুদ্ধ ভাবে বাংলা লেখা খুঁজে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
➤ ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা কতিপয় অনলাইন ও এফএম রেডিওতে বাংলা-ইংরেজি ভাষার সমন্বয়ে নতুন এক শঙ্কর জাতীয় ভাষার রূপ দিয়ে বাংলাকে একটি হাস্যকর ভাষায় পরিণত করা হচ্ছে!

তারপরও ২১ ফেব্রুয়ারি এলে বছরে একদিনের জন্য হলেও আমরা বাঙ্গালী সাজার চেষ্টা করি! এ লজ্জাজনক অবস্থার অবসান হবে কখন?

মোটকথা, শুধু কথায় নয়; কাজে বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসার প্রমাণ দিতে হবে, বিশুদ্ধ বাংলার চর্চা করতে হবে এবং মাতৃভাষায় গণ মানুষের কাছে সুমহান ইসলামের দাওয়াতকে ছড়িয়ে দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হওন। আমীন।
▬▬▬❖❖❖▬▬▬▫
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর..
জনপ্রিয় পোস্ট
সর্বশেষ আপডেট