তাবলীগ জামা’আত সুস্পষ্টভাবে ‘কবরপূজারি আকীদার’ অনুসারী। তাবলীগ জামা’আতের পাঠ্যসূচি হতে তাদের ‘কবরপূজারি আকীদার’ অকাট্য দলীল প্রমাণ
ভূমিকা:
দারুল উলূম দেওবন্দ হলো ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার ‘দেওবন্দ’ নামক স্থানে অবস্থিত একটি মাদ্রাসা। আনুমানিক ১৮৬৬ সালে ব্রিটিশ আমলে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। মাওলানা মুহাম্মাদ কাসেম নানুতুবি তাদের প্রধান ছিলেন। প্রতিষ্ঠাকালে আরও কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হলেন মাওলানা রশীদ আহমেদ গাঙ্গুহী, হাজী সৈয়দ আবিদ হুসাইন, মুহাম্মাদ ইয়াকুব নানুতুবি, রফি উদ্দিন উসমানী, যুলফিকার আলী, ফজলুর রহমান উসমানি প্রমুখ। একটি ডালিম গাছের নিচে দেওবন্দ মাদ্রাসার গোড়াপত্তন হয়।
দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আনুমানিক ৬০ বছর পর প্রায় ১৯২৬ সালে মুহাম্মাদ ইলিয়াস কান্ধলভি কর্তৃক ভারতের ‘মেওয়াতে’ দেওবন্দি দাওয়াতি শাখা হিসেবে তাবলীগ জামা’আত প্রতিষ্ঠিত হয়। তাবলীগ জামা’আতের অন্যতম প্রাণপুরুষ হচ্ছেন মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি।
তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত দেওবন্দি আলিম হিসাবে সুপরিচিত। তার উপাধি ছিল ‘শাইখুল হাদীস’। তিনি মাওলানা ইলিয়াসের নির্দেশে তাবলীগ জামা’আতের সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি হিসেবে বেশ কয়েকটি বই প্রণয়ন করেন। যার মধ্যে রয়েছে ফাযায়েলে আমল, ফাযায়েলে হজ্জ, ফাযায়েলে দরুদ, ফাযায়েলে সাদাকাত ইত্যাদি গ্রন্থ। এগুলোকে একত্রে ‘তাবলীগী নিসাব’ বলা হয়। আর এগুলোই হচ্ছে তাবলীগ জামা’আত নামক সংগঠনের মূল কিতাব। এগুলোর বাইরে আর কোনো কিতাব পাঠ করা ও শিক্ষা দেয়া কিংবা আলোচনা করা একপ্রকার নিষিদ্ধই বলা চলে। মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি এই বইগুলো একেবারেই সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে রচনা করেছেন। যেন সাধারণ জনগণেরা তাত্ত্বিক বা একাডেমিক আলোচনা বাদ দিয়ে সহজ-সরলভাবে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতে পারে।
তাবলীগ জামা’আত মূলত একটি সূফী সংগঠন। এদের আকীদা বিশ্বাস আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সাথে সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে তাওহীদ ও শির্কের বিষয়ে এদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ উলটো। এরা মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার পাশাপাশি কবরের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করাও বৈধ মনে করে। এছাড়া কবর থেকে ফয়েজ, বরকত, কল্যাণ লাভের আকীদাও পোষণ করে থাকে। সাধারণ মানুষদের জন্য প্রণীত তাবলীগ জামা’আতের কিতাবগুলোতে কবরের কাছে সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আমরা এই লেখায় ‘তাবলীগী নিসাব’ থেকেই প্রমাণ করব যে, তারা তাওহীদে বিশ্বাসী নয় বরং তাদের তাওহীদ কবরপূজার শিরক মিশ্রিত।
‘তাবলিগী নিসাবের’ কিতাবগুলো বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। উল্লিখিত কিতাবগুলোতে কিছু কুরআনের আয়াত ও সহীহ হাদীসের পাশাপাশি অসংখ্য যইফ ও জাল বর্ণনা রয়েছে। এর সঙ্গে অসংখ্য শিরকি, বিদ’আতি ও আজগুবি-ঈমান বিধ্বংসী কিচ্ছা কাহিনিও বিদ্যমান।
অল্প পরিসরে তাবলীগ জামা’আতের সকল বই সম্পর্কে আলোচনা সম্ভব নয়। উপরিউক্ত কিতাবগুলো থেকে আমরা কেবল ‘ফাজায়েলে হজ্জ’ নামক কিতাব থেকে রেফারেন্সসহ দেখাবো সেগুলোতে কি পরিমাণ শিরকি ও কুফরী শিক্ষা রয়েছে। ‘ফাজায়েলে হজ্জ’ কিতাবটি হজ্জের ফযীলত সম্পর্কে লেখা হয়েছে। সেখানে হজ্জের ফযিলতের পাশাপাশি রাসুল (সা.)-এর কবর সম্পর্কে তাদের আকিদা বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে। মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেবের লেখা থেকে যা যা প্রমাণ হয়:
ক) মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি রাসুল (সা.)-এর কবর জিয়ারতকে এতো গুরুত্ব দিয়েছেন যেন তা হজ্জের রুকন অথবা ওয়াজিব পর্যায়ের একটি কাজ!
খ) তিনি বিশ্বাস করেন রাসুল (সা.)-এর ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের মধ্যে কোনোই পার্থক্য নেই!
গ) তিনি সরাসরি রাসুল (সা.)-এর কবরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা, তাঁর কাছে দু’আ করা ইত্যাদি সমর্থন করেন। তিনি আরও বিশ্বাস করেন রাসুল (সা.) কবর থেকে মানুষের অভাব-অভিযোগ ও দুঃখ কষ্ট অনুধাবন করেন ও তার প্রতিকার করার ক্ষমতা রাখেন!
ঘ) মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি রাসুল (সা.) ছাড়াও সাহাবী ও বিভিন্ন নেককার ব্যক্তিদের কবরে সাহায্য প্রার্থনা জায়েজ মনে করেন এবং মৃত ব্যক্তিরা জীবিতদের আহবানে সাড়া দেয় ও উপকার করার ক্ষমতা রাখে বলেও বিশ্বাস করেন!
নোট: উপরিউক্ত চারটি (ক,খ,গ,ঘ) আকীদা ও আমল আহলে সুন্নাহর আকীদা বিশ্বাসের সাথে শুধু সাংঘর্ষিক নয় বরং কুফরী ও শিরকে আকবর যা একজন মুসলিমকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। সংক্ষিপ্ত পরিসরে উল্লিখিত সবগুলো পয়েন্ট নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। আমরা এখানে কেবল ‘কবরের কাছে সাহায্য কামনা’ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা সীমিত রাখবো। নিম্নে প্রথমে আমরা দেখাবো মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেব কীভাবে রাসুল (সা.)-এর কবরে সাহায্য চাওয়াকে উৎসাহিত করেছেন। অতঃপর সাহাবীদের ও অন্যান্য নেককার ব্যক্তিদের কবরে সাহায্য কামনা করার বিষয়ে উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ।
আমরা এখানে প্রমাণ হিসাবে মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেবের লিখিত বিখ্যাত কিতাব ‘ফাজায়েলে হজ্জ’ থেকে কিছু বক্তব্য উল্লেখ করার চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ। উর্দু ভাষায় লিখিত বইটির মূল লেখক হচ্ছেন মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি। বাংলাভাষায় বইটি অনুবাদ করেছেন মাওলানা মোহাম্মাদ ছাখাওয়াত উল্লাহ। বইটি পরিবেশন করেছে তাবলীগী কুতুবখানা ও তাবলীগী ফাউন্ডেশন, বাংলাবাজার। অক্টোবর ২০০২ সংস্করণ।
রাসুল (সা.)-এর কবর জিয়ারতের আদব সম্পর্কে মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেব যা উল্লেখ করেছেন:
বর্ণনা: ১
“দৃষ্টি নীচের দিকে রাখিবে, সেখানে এদিক সেদিক দেখা শক্ত বেয়াদবী। হাত পা খুব নীরব নিস্তব্ধ থাকিবে এবং মনে করিবে, হুজুরের চেহারা মোবারক এখন আমার সম্মুখে। আমি যে হাজির তাহা হুজুর (সা.) জানেন। মনে করিবে যেন, আমি হুজুরের জীবিতাবস্থায় তাঁহার দরবারে হাজির হইয়াছি। কেননা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার ব্যাপারে সেই সময় হুজুরের হায়াত এবং মউতের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না” ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৩৭
পর্যালোচনা: যাকারিয়া সাহেব বিশ্বাস করেন রাসুল (সা.)-এর জীবন ও মৃত্যুর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ কবরে শায়িত অবস্থায় রাসুল (সা.) সবকিছু দেখেন, শোনেন ও জানেন তথা গায়েব জানেন। এটা আহলে সুন্নাহর আকীদা নয় বরং সুস্পষ্ট শিরকি আকীদা। মহান আল্লাহ তায়ালা ছাড়া জগতের আর কেউই সবকিছু জানে না, শোনে না এবং সবকিছুর খবরও রাখে না। কেবল ও কেবল আল্লাহ তায়ালাই গায়েব জানেন। এছাড়া কোনো নবী-রাসুল, পীর-আউলিয়া এমনকি ফেরেশতা, জিন অথবা নেককার কোনো বুজুর্গ ব্যক্তিও গায়েব সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখেন না। অতএব আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সবকিছু জানে, শোনে ও দেখে তথা গায়েব সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এমন আকীদা পোষণ করা সুস্পষ্ট শিরকি ও কুফরী আকীদা।
আর আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর ইহকালিন ও পরকালিন জীবনের মধ্যে অবশ্যই বিশাল পার্থক্য রয়েছে। এই দু’টিকে গুলিয়ে ফেলা আহুলুস সুন্নাহর কোনো ব্যক্তির কাজ হতে পারে না।
রাসুল (সা.)-এর কাছে দু’আ করার সময় তাঁর কবরের দিকে পিঠ দেয়া যাবে না:
বর্ণনা: ২
“দোআ করার সময় মুখ হুজুরের চেহারা মোবারকের দিকে থাকিতে হইবে। যদিও অন্যান্য দোআর সময় চেহারা কেবলার দিকে রাখিতে হয়। কেননা এখানে কেবলার দিকে ফিরিলে হুজুর (সা.) পিছনে হইয়া যান, যাহা আদবের খেলাফ। তাই হুজুরের দিকে মুখ করিয়া দোআ করিবে’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৪৩
পর্যালোচনা: বর্তমান সময়ে বিভিন্ন মাজারে এই দৃশ্য দেখা যায়। মাজার জিয়ারতকারীরা জিয়ারত শেষে উলটো ভাবে অর্থাৎ মাজার বা কবরের দিকে পিঠ না দিয়ে বরং চেহারা ও বুক মাজারের দিকে দিয়ে বের হয়ে আসেন। এটা তারা ‘তাজিম’ বা সম্মান প্রদর্শনের জন্যই করে থাকেন। তারা মনে করেন কবর বা মাজারের দিকে পিঠ দেখানো শক্ত বেয়াদবি। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন এভাবে সম্মান না করলে কবরস্থ ব্যক্তি রাগান্বিত হয়ে তার ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখেন (নাউজুবিল্লাহ)।
এই ধরণের বিশ্বাস বা আকীদা সুস্পষ্ট শিরক। এই বিশ্বাসের সাথে ইসলামি আদব বা শিষ্টাচারের কোনো দূরতমও সম্পর্ক নেই। দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও নবী মুহাম্মাদ (সা.)-কে জীবিত অবস্থায় কোনো সাহাবী এভাবে সম্মান জানিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। আর তাঁর মৃত্যুর পরও আদব হিসাবে কেউ এমনটি করেছেন বলেও আমরা জানি না। তাছাড়া হাদীসে রাসুল (সা.) উল্লেখ করেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় স্থান মসজিদ। আর মসজিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ হলো বাইতুল্লাহ। সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান কাবা থেকেও কেউ এভাবে বের হয় না।
রাসুল (সা.) অথবা অন্য কোনো মৃত ব্যক্তি কারো কোনো সামান্যতম উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখেন না, তিনি যে কেউই হোন না কেন। কেউ যদি বিশ্বাস করে মৃত্যুর পর রাসুল (সা.) কারো উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখেন তাহলে তা বড় শিরক। সুতরাং, আমরা মনে করি, মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি কবর জিয়ারতের আদব সম্পর্কে যা উল্লেখ করেছেন তা ইসলামী শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং পরোক্ষভাবে কবরপূজার দিকেই মানুষকে ধাবিত করে।
রাসুল (সা.)-এর কবরে সুপারিশ/ওয়াসীলা কামনার শিরক:
বর্ণনা: ৩
‘’ছালামের পর হুজুরের উছিলায় আল্লাহ পাকের দরবারে দোআ করিবে এবং হুজুরের নিকট সুপারিশের জন্য দরখাস্ত করিবে’’ ফাজায়েলে হজ্জ পৃষ্ঠা নং ১৪০
বর্ণনা: ৪
”হুজুরের নিকট সুপারিশ চাও, আল্লাহ পাক সুপারিশ কবুল করিবেন” ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৪১
বর্ণনা: ৫
‘’ছালামের পর এইভাবে দোআ করিবে, হে আল্লাহর নবী! আমি আপনার নিকট সুপারিশ চাই এবং এই প্রার্থনা করি যেন আমার মৃত্যু হয় আপনার দ্বীনের উপর ও আপনার ছুন্নতের উপর’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৪১
বর্ণনা: ৬
‘’অন্য কেহ হুজুরের খেদমতে ছালাম বলিবার হুকুম করিয়া থাকিলে এইভাবে ছালামে আরজ করিবে, হে আল্লাহর নবী! অমুকের বেটা অমুকের তরফ হইতে আপনার উপর ছালাম। সে আপনার দরবারে আল্লাহ পাকের নিকট সুপারিশ চাহিতেছে’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৪৩
পর্যালোচনা: উল্লিখিত চারটি (৩-৬ নং) বর্ণনাতে মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর ব্যক্তিসত্তার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দুআ করার শিক্ষা দিচ্ছেন এবং সরাসরি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে সুপারিশ কামনা করছেন। রাসুল (সা.)-এর ব্যক্তিসত্তার ওয়াসীলায় দু’আ করা জায়েজ নয়। এমনকি খোদ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এ ধরনের দুআ করাকে নাজায়েজ বলেছেন। দেখুন ওয়াসীলা সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর আকীদা জানতে কমেন্ট বক্সে দেয়া লিংক দেখুন।
উক্ত চারটি বর্ণনায় এটাও প্রমাণিত হয় যে, মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সরাসরি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কবরে তাঁর কাছেই সুপারিশ প্রার্থনা করছেন এবং অপরকে রাসুল (সা.)-এর নিকট সুপারিশ কামনার জন্য শিক্ষা দিচ্ছেন। এটা সুস্পষ্টভাবে তাওহীদ পরিপন্থি কাজ তথা শিরক ও কুফর। প্রার্থনা করতে হবে শুধু আল্লাহ তায়ালার কাছে, অন্য কারো কাছে নয়। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে প্রার্থনা একজন মুসলিমকে মুশরিকে পরিণত করে দিবে।
রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর কবরের কাছে গিয়ে সুপারিশ প্রার্থনা করা সুস্পষ্ট শিরক। সুপারিশ সম্পর্কে সংক্ষেপে সঠিক বক্তব্য হচ্ছে, রাসুল (সা.) আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন এটা সত্য, তবে তিনি সুপারিশের মালিক নন। আর তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখেন না। সুপারিশের মালিক একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা। আল্লাহ তায়ালা যখন অনুমতি দিবেন এবং যার জন্য ইচ্ছা করবেন কেবল তার জন্যই রাসুল (সা.) সুপারিশ করতে পারবেন। সুতরাং সুপারিশ চাইতে হবে একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার কাছে, অন্য কারো কাছে নয়। এটাই আহলে সুন্নাহর আকীদা।
কিতাবটির অনুবাদকও রাসুল (সা.)-এর কবরে সুপারিশ কামনার শিরকে লিপ্ত হয়েছেন। ফাজায়েলে হজের অনুবাদক মাওলানা ছাখাওয়াত উল্লাহ রাসুল (সা.)- এর কবরে নিজের জন্য রাসুল (সা.)-এর কাছে সুপারিশ কামনা করেছেন:
বর্ণনা: ৭
“যাহারা আমার এই বাংলা অনুবাদখানা পড়িবেন তাহাদের খেদমতে নালায়েক পাপী গোনাহগারের সবিনয় ও করজোড় আবেদন, সেই মোবারক সময়ে এই অধম খাকছারের কথা যদি আপনার মনে আসিয়া যায় তবে অনুগ্রহপূর্বক আমার প্রিয় নবীজীর খেদমতে আরজ করিবেন, বড়ই এহছান হইবে। যদি আরবী শব্দ মনে না থাকে তবে উর্দু অথবা বাংলাতেই হুজুরের দরবারে আমার ছালামখানি এই বলিয়া পৌঁছাইয়া দিবেন যে, ইয়া রাসুলুল্লাহ! ছোলতান আহমদের বেটা ছাখাওয়াত উল্লাহ আপনার খেদমতে ছালাম পৌঁছাইতেছে এবং আপনার পরওয়ারদেগারের নিকট আপনার সুপারিশ চাহিতেছে” ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৪৩-১৪৪
পর্যালোচনা: মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেবের বইটি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করতে গিয়ে অনুবাদক মাওলানা ছাখাওয়াত উল্লাহ সাহেব যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেবের আকীদা বিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নিজেও রাসুল (সা.)-এর নিকট সুপারিশ কামনা করার শিরকে লিপ্ত হয়েছেন। সুপারিশ সম্পর্কে উপরেই সংক্ষিপ্ত আলোচনা উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব এখানে সেটার পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন।
পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে রাসুল (সা.)-এর উদ্দেশে সালাম পেশ করলে একদল ফেরেশতা সেই সালাম রাসুল (সা.)-এর কবরে পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এভাবে অন্য কারো মাধ্যমে সালাম পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে ইসলামি শরীয়তে কোনো নির্দেশনা নেই। কোনো সাহাবী এভাবে সালাম পৌঁছে দিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই।
সাহাবীদের কবরে সুপারিশ কামনার শিরক:
বর্ণনা: ৮
‘’হজরত ছিদ্দিক (রা.) এবং ওমর ফারুক (রা.) এর উপর ছালাম পড়ার পর উভয়ের কবরের মাঝখানে দণ্ডায়মান হইয়া দুইজনকে লক্ষ্য করিয়া একত্রে এইভাবে ছালাম পড়িবে ‘রাসুলুল্লাহর পাশে শায়িত হে ছাহাবীদ্বয়! আল্লাহ তায়ালা আমাদের তরফ হইতে আপনাদিগকে উপযুক্ত প্রতিদান দিন। আমরা আপনাদের খেদমতে এই জন্য হাজির হইয়াছি যে, আপনারা হুজুরে পাক (সা.)-এর দরবারে আমাদের জন্য এই বলিয়া দরখাস্ত করিবেন যেন তিনি আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করেন। যেন আল্লাহ আমাদিগকে হুজুরের দ্বীনের উপর, তাঁহার ছুন্নতের উপর জিন্দা রাখেন এবং আমাদের সমস্ত মুসলমানের হাশর যেন হুজুরে পাক (সা.) এর জমাতের মধ্যে হয়’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৪৫
পর্যালোচনা: উপরিউক্ত বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেব শুধু রাসুল (সা.)-এর কবরে সাহায্য চাওয়াকে বৈধ মনে করেন না, বরং সাহাবীদের কবরেও সাহায্য বা সুপারিশ কামনা করাকেও বৈধ মনে করেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেব সুপারিশের গোলকধাঁধায় খেই হারিয়ে ফেলেছেন। প্রথমে রাসুল (সা.)-এর কাছে সুপারিশ প্রার্থনা অতঃপর আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ও উমার ইবন খাত্তাব (রা.)-এর কবরে সুপারিশের জন্য সুপারিশ করা! আজব এক লেজেগোবরে অবস্থা। আল্লাহ মুস্তাআন। এ সবগুলোই শিরকি আকীদার প্রতিফলন। আমরা ইতোমধ্যে এ সম্পর্কে আলোচনা পেশ করেছি। সুতরাং এখানে আর পুনরাবৃত্তি করছি না।
উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো পরকালীন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত- যেমন ‘কবরবাসীর কাছে সুপারিশ চাওয়া’। নিম্নে আমরা দেখাবো ইহকালীন বিপদাপদ যেমন অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য রাসুল (সা.)-এর কবরে সাহায্য প্রার্থনার শিরক। ‘ফাজায়েল হজ্জ’ কিতাব থেকেই সামান্য কয়েকটি নমুনা উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ।
মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেব বিশ্বাস করেন ক্ষুধায় কাতর ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর কবরে উপস্থিত হয়ে খাবার প্রার্থনা করলে রাসুল (সা.) তাদের আহবানে সাড়া দেন:
বর্ণনা: ৯
রাসুল (সা.)-এর কবরে খাবার প্রার্থনার শিরক: অতঃপর কবর হতে রুটি দান!
‘’শায়েখ আবুল খায়ের (রহ.) বলেন, একবার মদীনা মোনাওয়ারায় হাজির হইয়া পাঁচ দিন পর্যন্ত আমাকে উপবাস থাকিতে হয়। খাওয়ার জন্য কিছুই না পাইয়া অবশেষে আমি হুজুরের এবং শায়খাইনের কবরের মধ্যে ছালাম পড়িয়া আরজ করিলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি আজ রাত্রে হুজুরের মেহমান হইব। এই কথা আরজ করিয়া মিম্বর শরীফের নিকট গিয়া আমি শুইয়া পড়িলাম, স্বপ্নে দেখি হুজুর পাক (সা.) তশরীফ আনিয়াছেন, ডানে হজরত আবু বকর, বাম দিকে হজরত ওমর এবং সামনে আলী (রা.)। হজরত আলী (রা.) আমাকে ডাকিয়া বলিলেন, এই দেখ, হুজুর (সা.) তাশরীফ আনিয়াছেন। আমি উঠিবা মাত্রই হুজুর (সা.) আমাকে একটা রুটি দিলেন, আমি উহার অর্ধেক খাইয়া ফেলি। তারপর যখন চোখ খুলিল তখন আমার হাতে বাকী অর্ধেক ছিল’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৫৫
পর্যালোচনা: সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীনে কেরাম, তাবে-তাবেয়ীন কয়দিন রাসুল (সা.)-এর কবরের কাছে গিয়ে খাবার প্রার্থনা করেছেন এবং তাঁর মেহমানদারী আশা করেছেন?!
বর্ণনা: ১০
ক্ষুধার কষ্ট দূর করার জন্য রাসুল (সা.)-এর কবরে সাহায্য প্রার্থনার শিরক: অতঃপর কবর হতে খাবারের ব্যবস্থা!
‘’আবু বকর ইবন মুকরী বলেন, আমি, ইমাম তিবরানী এবং আবু শায়েখ মদীনা শরীফে ক্ষুধায় বড় কষ্ট পাইতেছিলাম। রোজার উপর রোজা রাখিতাম। রাত্রি বেলায় হুজুরের কবর শরীফে গিয়া ক্ষুধার অভিযোগ করিলাম। ফিরিবার সময় তিবরানী বলেন, বসিয়া পড়, হয় কিছু খানা আসিবে না হয় মৃত্যু আসিবে। এবনে মোনকাদের বলেন, আমি এবং আবু শায়েখ দাঁড়াইয়া গেলাম। তিবরানী বসিয়া কি যেন চিন্তা করিতেছিলেন। হঠাৎ একজন আলাভী দরজা নাড়া দেয়। আমরা দরজা খুলিয়া দিলাম, দেখিলাম তাহার সহিত দুইজন গোলাম। তাহাদের হাতে বড় বড় দুইটি থলিয়া। থলিয়া দুইটি রাখিয়া আলাভী বলিয়া গেলেন, তোমরা হুজুরের নিকট অভিযোগ করিয়াছ। আমি স্বপ্নযোগে হুজুর (স.) হইতে তোমাদের নিকট কিছু পৌঁছাইবার আদেশ পাইয়াছি’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৬১
বর্ণনা: ১১
রাসুল (সা.)-এর কবরে মেহমান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা: অতঃপর কবর হতে রুটি প্রদান!
‘’এবনে জালা (র.) বলেন, আমি মদীনা মোনাওয়ারায় বড় অভাবের সম্মুখিন হইয়াছিলাম। হুজুরের কবরের নিকট গিয়া আরজ করিলাম, হুজুর! আমি আপনার মেহমান! ইত্যবসরে আমার একটু চোখ লাগিয়া আসিল। হুজুর (স.) আমাকে একটা রুটি দিলেন, আমি উহার অর্ধেক খাইলাম। জাগ্রত হইয়া দেখি বাকী অর্ধেক আমার হাতে’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৬১
বর্ণনা: ১২
সারিদ খাওয়ার জন্য রাসুল (সা.)-এর কবরে প্রার্থনা: অতঃপর কবর হতে খাবারের ব্যাবস্থা!
‘’ছাইয়েদ আবু মোহাম্মদ হোছাইনী বলেন, আমি মদীনা শরীফে তিনদিন পর্যন্ত ভুখা ছিলাম। অতঃপর মিম্বর শরীফের নিকট গিয়া দুই রাকাত নামাজ পড়িয়া হুজুরের দরবারে আরজ করিলাম, দাদাজান! আমি ভুখা আছি এবং ছরীদ খাইতে আমার দিল চায়। তারপর আমি শুইয়া পড়িলাম। ক্ষণেক পর এক লোক আসিয়া আমাকে জাগাইল এবং একটি পেয়ালায় করিয়া ছরীদ পেশ করিল, যেখানে খুব গোশত, ঘি এবং খোশবু ছিল। আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, ইহা কোথা হইতে আসিয়াছে? সে বলিল, আমার সন্তানগণ তিনদিন পর্যন্ত ইহা খাইতে চায়। অবশেষে আল্লাহ পাক ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। আমি উহা পাক করিয়া শুইয়া পড়ি। খাবে আমার নবীজীকে দেখিতে পাই, তিনি বলিতেছেন, মসজিদে তোমার এক ভাই ছরীদ খাইতে চায়, তাহাকেও কিছু দিয়া দাও’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৬২-১৬৩
বর্ণনা: ১৩
ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাসুল (সা.) এর নিকট খাদ্যের আবেদন: অতঃপর তৎক্ষণাৎ খাদ্যের ব্যবস্থা! শুধু তাই নয় বরং যখনই খাদ্যের প্রয়োজন হবে তখনই খাবারের সুব্যবস্থা!
‘’আবুল আব্বাছ এবনে মুকরী অন্ধ ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তিনদিন পর্যন্ত মদীনা শরীফে ভুখা অবস্থায় ছিলাম। অবশেষে হুজরা শরীফের নিকট নিবেদন করিলাম, হুজুর! আমি ভুখা। ইহার পর দুর্বল অবস্থায় শুইয়া পড়িলাম। এমতাবস্থায় একটি মেয়ে আসিয়া পা দ্বারা আমাকে জাগাইয়া তাহার ঘরে লইয়া গেল এবং আটার রুটি, ঘি ও খেজুর খাইতে দিল। মেয়েটি বলিল, আবুল আব্বাছ খাও। আমার দাদাজান (অর্থাৎ রাসুল) তোমাকে খাওয়াইতে বলিয়াছেন, যখনই ক্ষুধা পাইবে আমাদের এখানে আসিয়া খাইয়া যাইও’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৬৩-১৬৪
অভাব-দুর্ভিক্ষ দূর করার জন্য রাসুল (সা.)-এর কবরে সাহায্য প্রার্থনার শিরক:
বর্ণনা: ১৪
‘’হজরত ওমরের জামানায় একবার মদীনা শরীফে ভীষণ অভাব দেখা দিয়াছিল। জনৈক ব্যক্তি হুজুর পাক (সা.)-এর কবর শরীফে হাজির হইয়া আরজ করিল, ইয়া রাছুলুল্লাহ! আপনার উম্মত ধ্বংস হইয়া যাইতেছে, বৃষ্টির জন্য দু’আ করুন’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৬০
পর্যালোচনা: সাহাবায়ে কেরাম রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পরে বৃষ্টি চেয়ে দু’আ করতে বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচা আব্বাস (রা.)। আর লোকেরা আব্বাস (রা.)-এর দু’আর ওয়াসীলায় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি কামনা করেন। আর জনৈক ব্যক্তি যিনি মানুষ না আদৌ জিন শয়তান সে রাসুল (সা.)-এর কবরের কাছে দু’আ চায়! বিচারের ভার পাঠকের উপর।
অভাবগ্রস্ত হয়ে রাসুল (সা.)-এর কবরে সাহায্য প্রার্থনার শিরক: অতঃপর মুদ্রা প্রাপ্তি!
বর্ণনা: ১৫
‘’ছুফী আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ বিন আবী জারআ বলেন, আমি একবার আমার পিতার সঙ্গে মক্কা শরীফে যাই। আমরা ভীষণ অভাবগ্রস্ত ছিলাম। ঐ অবস্থায় মদীনা শরীফ চলিয়া যাই। রাত্রি বেলায় ক্ষুধায় ছটফট করিতে থাকি। আমি নাবালেগ ছিলাম, বারংবার পিতার নিকট ক্ষুধার কথা বলিতে থাকি। আমার পিতা কবর শরীফের নিকট গিয়া বলিলেন, হুজুর আমরা আজ আপনার মেহমান। এই বলিয়া তিনি মোরাকাবায় বসিয়া গেলেন। অনেকক্ষণ পর তিনি মাথা উঠাইয়া কখনো কাদিতে এবং কখনো হাসিতে লাগিলেন। লোকেরা ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি বলিলেন, আমার হুজুরের জেয়ারত নছীব হইয়াছে। হুজুর (স.) আমাকে কিছু দেরহাম দান করিয়াছেন। দেখা গেল, তাহার হাতে অনেকগুলি দেরহাম রহিয়াছে। ছুফীজী বলেন, আল্লাহ পাক উহাতে এত বরকত দান করিয়াছেন যে, শিরাজে ফিরিয়া যাওয়া পর্যন্ত আমরা উহা হইতে খরচ করিতে থাকি’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৬১-১৬২
পর্যালোচনা: সাহাবায়ে কেরামের মাঝে যখন মতানৈক্য ও দন্দ সৃষ্টি হয় অবশ্যই সেটা এক বড় বিপর্যয় ও সংকটময় পরিস্থিতি ছিল। এমন সংকটময় পরিস্থিতি থেকে দিকনির্দেশনা লাভের জন্য বা উম্মতের সংকটের সমাধান জানতে চেয়ে শত শত সাহাবায়ে কেরাম এমনকি উম্মুল মু’মিনিন আয়িশাহ (রা.) পর্যন্ত কেউই একটিবারের জন্যও আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কবরের দ্বারস্থ হলেন না।
শুধু জাগ্রত অবস্থায় নয়, স্বপ্নের মধ্যেও রাসুল (সা.)-এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা: অতঃপর সত্যি সত্যি দিরহাম প্রাপ্তি!
বর্ণনা: ১৬
‘’শায়েখ আহমদ বলেন, আমি তের মাস পর্যন্ত ময়দানে জঙ্গলে পেরেশান হইয়া ফিরিতে থাকি। ইহাতে আমার শরীরের চামড়া পর্যন্ত খসিয়া যায়। অবশেষে হুজুর ও শায়খাইনের খেদমতে ছালাম করিতে যাই। রাত্রি বেলায় হুজুর স্বপ্নে আমাকে বলেন, আহমদ! তুমি আসিয়াছ। আমি বলিলাম, হুজুর আমি আসিয়াছি। আমি বড় ক্ষুধার্ত, আমি হুজুরের মেহমান। হুজুর (স.) বলিলেন, দুই হাত খোল। আমি দুই হাত খুলিলে দেরহাম দিয়া ভর্তি করিয়া দিলেন। জাগ্রত হইয়া দেখি, আমার হাত দেরহামে ভর্তি। আমি উহা দ্বারা কিছু খাইয়া আবার জঙ্গলের দিকে রওয়ানা হইলাম’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৬২
পর্যালোচনা: অমুসলিমদের রীতি অনুযায়ী জঙ্গলে ধ্যান করা আর ক্ষুধা লাগলে কবরের কাছে দিরহাম চাওয়া আমাদের আকীদা অনুযায়ী আহলুস সুন্নাহর কোনো ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। আহলুস সুন্নাহর একজন ব্যক্তি জঙ্গলে যাবে কাঠ কাটতে বা খাবার উপযোগী রিজিকের অন্বেষণে, দিরহাম প্রাপ্তির আশায় কবরে যাবে না। এধরণের কাজ আহলুস সুন্নাহর কোনো ব্যক্তির হতে পারে না বরং দ্বীন বিকৃতকারী বিকারগ্রস্ত সূফী বিদ’আতিদের কাজ হতে পারে।
কষ্ট থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য রাসুল (সা.)-এর কবরে সাহায্য প্রার্থনার শিরক: অতঃপর কবর হতে সাহায্য লাভ!
বর্ণনা: ১৭
‘’ইউছুফ বিন আলী বলেন, জনৈক হাশেমী মেয়েলোক মদীনায় বাস করিত। তাহার কয়েকজন খাদেম তাহাকে বড়ই কষ্ট দিত। সে হুজুরের দরবারে ফরিয়াদ লইয়া হাজির হইল। রওজা শরীফ হইতে আওয়াজ আসিল, তোমার মধ্যে কি আমার আদর্শের প্রতি আনুগত্যের আগ্রহ নাই? তুমি ছবর করো, যেমন আমি ছবর করিয়াছিলাম। মেয়েলোকটি বলেন, এই সান্তনাবাণী শুনিয়া আমার যাবতীয় দুঃখ মুছিয়া গেল। ঐদিকে বদ আখলাক খাদেমগুলি মরিয়া গেল’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৫৯
পর্যালোচনা: হাজ্জাজ বিন ইউসুফের হাতে নির্যাতিত কোনো সাহাবী বা অন্যান্য মুসলিমেরা কখনো কি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কবরে গিয়ে তাঁদের কষ্টের ফরিয়াদ জানিয়েছেন?! ইসলামের ইতিহাসে কোনো তাওহীদবাদী ইমাম কখনো কি নির্যাতনের শিকার হয়ে নির্যাতন ও যুলুমের প্রতিকারের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কবরে ফরিয়াদ জানিয়েছেন!?
অন্যায়ভাবে প্রহৃত এক ব্যক্তির রাসুল (সা.)-এর নিকট অভিযোগ পেশ: অতঃপর বিচার!
বর্ণনা: ১৮
‘’ছাবেত বিন আহমদ বলেন, তিনি একজন মোয়াজ্জেনকে মসজিদে নববীতে আজান দিতে দেখিয়াছিলেন। মোয়াজ্জেন যখন আচ্ছালাতু খায়রুম মিনান্নাওম বলিল, তখন এক খাদেম আসিয়া তাহাকে একটি থাপ্পর মারিল। মোয়াজ্জেন কাঁদিয়া উঠিয়া আরজ করিল, ইয়া রাছুলুল্লাহ! আপনার উপস্থিতিতে আমার এইরুপ হইতেছে? সঙ্গে সঙ্গে সেই খাদেমের শরীর অবশ হইয়া গেল। লোকজন তাহাকে উঠাইয়া ঘরে লইয়া গেল এবং তিনদিন পর সে মরিয়া গেল’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৬২
নিজের দেশে ফেরার জন্য রাসুল (সা.)-এর কবরে সাহায্য প্রার্থনা: অতঃপর নিজ দেশে গমন!
বর্ণনা: ১৯
‘’শায়েখ আবদুছ ছালাম বিন আবিল কাছেম বলেন, আমার নিকট এক ব্যক্তি বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, আমি মদীনা শরীফে উপস্থিত ছিলাম। আমার নিকট খাওয়ার মত কিছুই ছিল না। ইহাতে আমি খুব দুর্বল হইয়া গেলাম এবং হুজুরের খেদমতে আরজ করিলাম, হে দোজাহানের সর্দার! আমি মিসরের বাসিন্দা, পাঁচ মাস যাবৎ হুজুরের খেদমতে পড়িয়া আছি। এখন আল্লাহর নিকট এবং আপনার খেদমতে আরজ করিতছি যে, এমন একজন লোক ঠিক করিয়া দিন, যে আমার খাওয়ার খবর নিবে অথবা আমার দেশে ফিরিবার এন্তেজাম করিয়া দিন।
হঠাৎ একজন লোক হুজরা শরীফের নিকট আসিয়া কি যেন বলিয়া অবশেষে আমার নিকট আসিয়া আমার হাত ধরিয়া বলিল, আমার সহিত চল। সে আমাকে লইয়া বাবে জিব্রিল দিয়া বাহির হইয়া জান্নাতুল বাকীর উপর দিয়া একটি তাঁবুর মধ্যে লইয়া গেল। সেখানে নিয়া খানা পাকাইয়া আমাকে খুব তৃপ্তির সহিত খাওয়াইল। পরে সে দুইটি থলিয়ার মধ্যে প্রায় সাত সের পরিমান খেজুর দিয়া আমাকে বলিল, তোমাকে কছম দিয়া বলিতেছি, দাদা আব্বার (অর্থাৎ রাসুলের) নিকট তুমি আর অভিযোগ করিবে না, ইহাতে তাঁহার খুব কষ্ট হয়। যখনই তোমার খানা শেষ হইয়া যাইবে তোমার নিকট আবার নতুন খানা পৌঁছাইয়া যাইবে। এই বলিয়া সে খেজুরের থলিয়া আপন গোলামকে হুজরা শরীফ পর্যন্ত দিয়া আসিতে বলে। আমি চার দিন পর্যন্ত উহা হইতে খাইতে থাকি। তাহা শেষ হওয়ার পর সেই গোলাম আবার খানা পৌঁছাইয়া দেয়। এইভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর ইয়াম্বুগামী একটি কাফেলার সহিত আমি তথায় চলিয়া যাই’’ ফাজায়েলে হজ্জ,পৃষ্ঠা নং ১৬৩
রাসুল (সা.)-এর কবরে সুস্থতার জন্য পত্রপাঠ: অতঃপর রোগীর আরোগ্য লাভ!
বর্ণনা: ২০
‘’বর্ণিত আছে, গ্রানাডার এক ব্যক্তি কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়। ডাক্তারগণ পর্যন্ত নিরাশ হইয়া তাহার জীবনের আশা ত্যাগ করেন। উজীর আবদুল্লাহ কয়েকটি বয়াতসহ তাহাকে হুজুর (ছ.)-এর খেদমতে একটি পত্র লিখিয়া হাজীদের কাফেলার সাথে পাঠাইয়া দেয়। লোকটির স্বাস্থ্যের জন্য যখন ঐ পত্রটি হুজুরের কবর শরীফের নিকট পড়া হয়, তখনই সে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য লাভ করিয়া ভালো হইয়া যায়’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৬৬
পর্যালোচনা: সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশাতেও কেবল ‘পত্রপাঠ’ ছাড়া রুকইয়া, সেঁক দেওয়া, রক্তমোক্ষম বা হিজামাসহ বিভিন্ন ও নানাবিধ চিকিৎসার অনুমোদন পেয়েছেন। ‘কবরে পত্রপাঠের মাধ্যমে সুস্থতা লাভ করার এই অভিনব পদ্ধতি হয়তো সাহাবীদের জানা ছিল না! অসুস্থ ব্যক্তির জন্য কবরে ‘পত্রপাঠের’ মাধ্যমে সুস্থতা লাভের অভিনব পদ্ধতি গ্রানাডার একব্যক্তি দ্বারাই আবিষ্কৃত হল। (আল্লাহু মুস্তাআন)
কবর থেকে হাত বের করার জন্য রাসুল (সা.)-এর কাছে দু’আ করা, যেন তাঁর হাতে চুম্বন করার ইচ্ছা পূরণ হয়: অতঃপর কবর হতে হাত বের হওয়া!
বর্ণনা: ২১
‘’বিখ্যাত ছুফী ও বুজুর্গ শায়েখ আহমদ রেফায়ী (র.) ৫৫৫ হিজরী সনে হজ সমাপন করিয়া জেয়ারতের জন্য মদীনায় হাজির হন। তিনি কবর শরীফের সামনে দাঁড়াইয়া এই দুইটা বয়াত পড়েন- ‘দূরে থাকা অবস্থায় আমি আমার রুহকে হুজুরের খেদমতে পাঠাইয়া দিতাম, সে আমার নায়েব হইয়া আস্তানা শরীফে চুম্বন করিত। আমি আজ সশরীরে দরবারে হাজির হইয়াছি। কাজেই হুজুর আপন হস্ত মোবারক বাড়াইয়া দিন যেন আমার ঠোঁট তাহা চুম্বন করিয়া তৃপ্তি হাছেল করিতে পারে।
বয়াত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কবর শরীফ হইতে হাত মোবারক বাহির হইয়া আসে এবং হজরত রেফায়ী (র.) তাহা চুম্বন করিয়া ধন্য হন। বলা হয়, সেই সময় মসজিদে নববীতে নব্বই হাজার লোকের সমাগম ছিল। সকলেই বিদ্যুতের মত হাত মোবারকের চমক দেখিতে পায়। তাহাদের মধ্যে মাহবুবে ছোবহানী হজরত আব্দুল কাদের জিলানী (র.)-ও ছিলেন’’ ফাজায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠা নং ১৫৮
পর্যালোচনা: আহমদ রেফায়ীর বয়াত শুনিয়া যদি রাসুল (সা.)-এর হস্ত মোবারক কবর হইতে বাহির হইয়া থাকে সেই যুক্তিতে কারবালার দিন তাঁহার (সা.) তো কবর হইতে উঠিয়া ছুটিয়া যাওয়ার কথা! আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মাফ করুন।
মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেবের উল্লিখিত ১৩টি বক্তব্য (৯ -২১ নং পর্যন্ত) সামগ্রিক ও সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
উল্লিখিত (৯-২১ নং) বর্ণনাসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি বিশ্বাস করেন, রাসুল (সা.) তাঁর মৃত্যুর পর উম্মাহর অবস্থা সম্পর্কে সচেতন, তাঁর কাছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক বিষয়ে সাহায্য কামনা করা জায়েজ এবং তিনি কবর থেকে কারো আহবানে সাড়া দেন এবং বিপদাপদে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন।
সংক্ষিপ্তভাবে আমরা বলতে চাই যে, মৃত্যুর পর রাসুল (সা.) উম্মাহ বা এই দুনিয়া সম্পর্কে সচেতন নন। কারো বিপদাপদে সাড়া দেওয়ার এবং তা দূরীভূত করার তাঁর কোনো ক্ষমতা নেই।
আল্লাহর রাসুল (সা.) উম্মাহ সম্পর্কে সচেতন নন এবং তিনি কারো উপকার বা অপকার করতে সক্ষম নন। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কমেন্ট বক্সে দেয়া লিঙ্কটি দেখুন।
তাবলীগ জামা’আতের প্রাণপুরুষ ও তাবলীগী নিসাবের লেখক মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি শুধুমাত্র রাসুল (সা.) ও সাহাবীদের (রা.)-দের কবরে সাহায্য প্রার্থনা জায়েজ মনে করেন না, বরং অন্যান্য নেককার ব্যক্তিদের কবরে সাহায্য প্রার্থনাকেও জায়েজ মনে করেন!!! দেখুন নিম্নের বর্ণনা:
নবী-রাসুল ও সাহাবী ছাড়া অন্যান্য নেককার(!) লোকদের কবরে সাহায্য প্রার্থনার শিরক:
বর্ণনা: ২২
প্রখ্যাত দেওবন্দী আলেম যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেব তার বিখ্যাত কিতাব ফাজায়েলে সাদাকাত গ্রন্থে বলেন: ”মিশরে একজন নেকবখত লোক ছিলেন। অভাবগ্রস্ত হইয়া কোন এক লোক তাহার নিকট আসিলে তিনি চাঁদা উসুল করিয়া তাহাকে দিয়া দিতেন। একদা জনৈক ফকির তাহার নিকট আসিয়া বলিল আমার একটা ছেলে হইয়াছে, তাহার এছলাহের ব্যবস্থার জন্য আমার নিকট কিছুই নাই। এই ব্যাক্তি উঠিল ও ফকিরকে অনেক লোকের নিকট লইয়া গিয়াও ব্যর্থ হইয়া ফিরিল। অবশেষে নৈরাশ হইয়া একজন দানবীর ব্যাক্তির কবরের নিকট গিয়া সমস্ত কথা তাহাকে শুনাইল। রাত্রি বেলায় সেই লোকটি কবরওয়ালাকে স্বপ্নে দেখিল যে, সে বলিতেছে ‘আমি তোমার যাবতীয় অভিযোগ শুনিয়াছি কিন্তু বলিবার অনুমতি দেওয়া হয় নাই। তুমি আমার ঘরে গিয়া পরিবারস্থ লোকদিগকে বল ঘরের অমুক অংশে যেখানে চুলা রহিয়াছে, উহার নিচে একটা চিনা বরতনে পাঁচশত আশরাফী রহিয়াছে তাহারা যেন উঠাইয়া সেই ফকিরকে দিয়া দেয়’’ (সংক্ষিপ্ত) ফাজায়েলে সাদাকাত: মুল-যাকারিয়া সাহারানপুরি, অনুবাদক-ছাখাওয়াত উল্লাহ; ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৩২২; তাবলিগী কুতুবখানা ১৪২৬ হিজরী।
পর্যালোচনা: কবরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা যে শিরক, ইতোমধ্যেই আমরা তা উল্লেখ করেছি। তাবলীগ জামা’আতের কিতাবে উল্লিখিত এই বর্ণনার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরি সাহেব বিভিন্ন নেককার ব্যক্তির কবরে সাহায্য প্রার্থনা জায়েজ মনে করেন। উল্লিখিত ঘটনার মাধ্যমে আরও বোঝা যায়, যখন জীবিতদের থেকে নিরাশ হয়ে যাবে আর কোথাও কিছু না পাবে, তখন কোন দানশীল ব্যক্তির কবরে গিয়ে তোমার সমস্ত পেরেশানির কথা বর্ণনা কর। কারণ দানশীল ব্যক্তি মৃত্যুর পরেও শুনতে পায় এবং তোমার আহবানে সারা দিতে এবং সাহায্য করতে সক্ষম! (নাউজুবিল্লাহ)
আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, তাঁর কাছে দু’আ করা, তাঁর উপর ভরসা করা, তাঁর কাছেই আশ্রয় কামনা করা ইবাদত। আর এই ইবাদত অন্যের জন্য সম্পাদন করাই শিরক। মৃতব্যক্তি জীবিতদের বিপদে সাহায্য-সহযোগিতা করতে সক্ষম নয়। কারো কবর বা তথাকথিত মাজারে উপস্থিত হয়ে অথবা অনুপস্থিত থেকে মৃতব্যক্তির কাছে কিছু কোনো কিছু প্রার্থনা করা কবরপূজারই নামান্তর যা শিরকে আকবর। কবরের নিকট সাহায্য প্রার্থনাকারী ব্যাক্তি ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়। যে ব্যাক্তি কবরের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে সে অবশ্যই কাফির ও মুশরিক হয়ে যাবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, কবরপূজা বলতে অনেকেই কবরকে সিজদা করা বুঝে থাকেন। কবরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করাকে অনেকেই শিরক মনে করেন না। যদিও দু’টোই শিরক। অনেক অজ্ঞ ও নামধারী মুসলিমেরা অমুসলিম তথা মুশরিকদের অনুসরণে তথাকথিত ওলী-আউলিয়ার কবরে গিয়ে তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। এই সাহায্য প্রার্থনা মূলত দুই ধরনের:
১) কেউ সরাসরি কবরস্থ মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য কামনা করে। যেমন, হে অমুক! আপনি আমার বিপদ দূর করে দিন, আপনি আমাকে সাহায্য করুন, আমাকে সন্তান দান করুন, আমার ব্যবসায় উন্নতি দান করুন… ইত্যাদি।
২) আবার কেউ সরাসরি না চেয়ে তাদের কাছে এভাবে দু’আ করে, হে অমুক! আমি আল্লাহর গুনাহগার বান্দা, আপনি আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন… ইত্যাদি, ইত্যাদি।
উল্লিখিত দু’টো উদাহরণে কবরের নিকট সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও মূলত দু’টোই সমান অপরাধ।
মৃতব্যক্তি কোনো উপকার করতে সক্ষম নয়, এমনকি তারা কারো আহবানও শুনতে পায় না। মৃতদেরকে আহবান করা শিরকে আকবার, যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। কেউ যদি বিশ্বাস করে কোনো বুজুর্গ, ওলী-আউলিয়া, অথবা অন্য কোনো নেককার ব্যক্তিরা মৃত্যুর পর গায়েব জানেন অথবা তাদের উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রয়েছে এবং এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে কেউ যদি কোনো কবর বা মাজারে গিয়ে মৃতব্যক্তির নিকট সাহায্য কামনা করে তাহলে সেই ব্যক্তি কাফির, ইসলামে তার বিন্দুমাত্র কোনো অংশ নেই। কবরের নিকট সাহায্য প্রার্থনা তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কমেন্ট বক্সে উল্লেখকৃত লিঙ্কটি দেখুন।
পরিশেষে বলতে চাই, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কবরপূজাসহ সকল ধরণের শিরক পরিত্যাগ করে তাওহীদের উপর অটল থাকার তৌফিক দান করুন।
–আনিছুর রহমান, বিশিষ্ট কলামিস্ট, ঢাকা।