উম্মতের শ্রেষ্ঠ লোকদের বিদায় কিয়ামতের অন্যতম আলামত
ভূমিকা:
সৎ ও নেককার লোকদের বিদায় নেয়া কিয়ামতের অন্যতম একটি আলামত, বিশেষ করে উম্মতের বিজ্ঞ আলিমদের মৃত্যু। কিয়ামতের পূর্বে জ্ঞান বা ইলম হ্রাস পাবে আর সর্বত্র মূর্খতা, অজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে। তবে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার অন্তর থেকে সরাসরি ইলম তুলে নিবেন না বরং আলিমগণকেই দুনিয়া থেকে তুলে নিবেন। অর্থাৎ একে একে বিজ্ঞ আলিমদের মৃত্যু ঘটবে।
এভাবে বিজ্ঞ আলিমদের সংখ্যা কমে গিয়ে এক সময় দুনিয়া আলিমশুন্য হয়ে পড়বে। আর তখন মানুষেরা অজ্ঞ, মূর্খ, জাহিলদেরকে আলিমদের আসনে বসাবে এবং তাদেরই ওয়ায, নসীহত, খুৎবা শুনবে এবং তাদের কাছেই ফাতওয়া চাইবে। অতঃপর আলিমদের আসনে বসা সেইসব অজ্ঞরা কুরআন সুন্নাহর জ্ঞান ব্যতিরেকেই মানুষদেরকে ফাতওয়া প্রদান করবে। এভাবে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে। নিম্নে এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করার চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ।
দুনিয়া কিয়ামতের দিকে যতটা অগ্রসর হতে থাকবে ইলমের ঘাটতি ততটাই বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এমনকি শেষ যামানায় ইলমকে উঠিয়ে নেওয়া হবে:
হাদীস নং ১
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি: ‘’কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম কমে যাবে, মুর্খতা বৃদ্ধি পাবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, মদপান বেড়ে যাবে, নারীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পুরুষদের সংখ্যা কমে যাবে। এমনকি পঞ্চাশজন নারীর জন্য তত্বাবধায়ক হবে মাত্র একজন পুরুষ’’
দ্রষ্টব্য: বুখারী ৮১, ৫২৩১, ৫৫৭৭, ৬৮০৮; মুসলিম ৬৬৭৯-(৯/…); তিরমিযি ২২০৫; ইবন মাযাহ ৪০৪৫
হাদীস নং ২
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘’কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম বিলুপ্ত হবে, মুর্খতা প্রসার পাবে, মদপান বৃদ্ধি পাবে এবং যেনা-ব্যভিচার বিস্তার লাভ করবে’’
দ্রষ্টব্য: বুখারী ৮০, মুসলিম ৬৬৭৮-(৮/২৬৭১); আল লু’লু ওয়াল মারজান ১৭০৯; মিশকাতুল মাসাবীহ ৫৪৩৭
হাদীস নং ৩
শাকীক (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ও ও আবু মুসা (রা.)-এর সাথে ছিলাম। তারা বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: ‘’কিয়ামতের পূর্বে এমন একটি যুগ আসবে যখন সর্বত্র মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে, ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং ‘হারজ’ বৃদ্ধি পাবে। আর ‘হারজ’ হল হত্যাকাণ্ড’’
দ্রষ্টব্য: বুখারী ৭০৬২, ৭০৬৩, ৭০৬৪, ৭০৬৫, ৭০৬৬; মুসলিম ৬৬৮১-(১০/২৬৭২); তিরমিযি ২২০০; আল লু’লু ওয়াল মারজান ১৭১০
হাদীস নং ৪
আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘’কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন না ইলম তুলে নেয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং ‘হারজ’ বৃদ্ধি পাবে। এমনকি তোমাদের ধনসম্পদ এত বেড়ে যাবে, তা উপচে পড়বে’’
দ্রষ্টব্য: বুখারী ১০৩৬
হাদীস নং ৫
আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ”কিয়ামত সন্নিকটবর্তী হলে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে, ফিতনাহ প্রসার হবে, কৃপণতা বেড়ে যাবে এবং ‘হারজ’ বৃদ্ধি পাবে। লোকেরা বলল, ‘হারজ’ কী? তিনি বললেন, হত্যা’’
দ্রষ্টব্য: মুসলিম ৬৬৮৫-(১১/১৫৭), ৬৬৮৬-(…/…); আল লু’লু ওয়াল মারজান ১৭১১
হাদীস নং ৬
আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: ‘’শেষ যামানায় ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, মুর্খতা ও ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে এবং ‘হারজ’ বেড়ে যাবে। জিজ্ঞেস করা হল, ‘হারজ’ কী? তিনি হাতের ইশারায় বললেন, ‘এ রকম’। যেন তিনি এর দ্বারা ‘হত্যা’ বুঝিয়েছেন’’
দ্রষ্টব্য: বুখারী ৮৫
নেককার ও আল্লাহর সৎ বান্দাগণের বিদায় কিয়ামতের অন্যতম আলামত। কিয়ামতের সময় যত ঘনিয়ে আসবে নেককারগণ তত দ্রুতই দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে:
হাদীস নং ৭
মিরদাস আসলামী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘’নেককারগণ একের পর এক বিদায় নিতে থাকবে। এক পর্যায়ে গম ও খেজুরের খোসা সদৃশ (অর্থাৎ নিকৃষ্ট) লোকেরাই কেবল অবশিষ্ট থাকবে। আল্লাহ এদের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করবেন না’’
দ্রষ্টব্য: বুখারী ৪১৫৬, ৬৪৩৪; মিশকাতুল মাসাবীহ ৫৩৬২
মহান আল্লাহ বান্দার অন্তর থেকে ইলম তুলে নিবেন না বরং আলিমদেরকে তুলে নেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ইলম তুলে নিবেন:
হাদীস নং ৮
আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আ’স (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি: ‘’নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে যে ইলম দান করেছেন, তা হঠাৎ করেই উঠিয়ে নিবেন না বং আলিমগণকে তাদের ইলমসহ তুলে নেয়ার মাধ্যমে তা উঠিয়ে নিবেন।
অবশেষে কোনো আলিম অবশিষ্ট থাকবেন না, কেবল মুর্খ লোকেরাই থাকবে। যখন কোন আলিম অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা মুর্খদেরকেই নেতা বানিয়ে নিবে। তাদের কাছে ফাতওয়া চাওয়া হবে। তারা না জেনেই মনগড়া ফাতওয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে‘’
দ্রষ্টব্য: বুখারী ১০০, ৭৩০৭; মুসলিম ৬৬৮৯-(১৩/২৬৭৩), ৬৬৯২-(১৪/…); তিরমিযি ২৬৫২; ইবন মাযাহ ৫২; রিয়াদুস স্বালিহীন ১৪০০; আল লু’লু ওয়াল মারজান ১৭১২; মিশকাতুল মাসাবীহ ২০৬; হাদীস সম্ভার ১৫৬৯, ১৫৭৮
–আনিছুর রহমান, বিশিষ্ট কলামিস্ট, ঢাকা।
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ। আভাস মাল্টিমিডিয়া.কম এ ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ ঈমান ও আমলের দাওয়াতী ওয়েবসাইট। এটি সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত এবং কোন প্রকার দল / সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত নয়। আমাদের আক্বীদাহ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাহ। আমাদের মানহাজ সালাফে সালেহীনদের মানহাজ। আমাদের দাওয়াত শিরকমুক্ত, কুফরমুক্ত, নিফাক্বমুক্ত ও বিদ‘আতমুক্ত ঈমান ও আমলের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাওহীদ ও সুন্নাত ভিত্তিক ঈমান ও আমল গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
Leave a Reply