রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন

রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধ : একটি পর্যালোচনা -১ম পর্ব
কাজী আসাদ বিন রমজান / ৪৮৯ কত বার
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২

রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধ : একটি পর্যালোচনা
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক*


যারা মোটামুটি বর্তমান বিশ্বের খবরাখবর রাখেন তারা সকলেই জানেন যে, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। করোনাভাইরাসের পর বর্তমান মিডিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু এই যুদ্ধ। বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক আলোচনা পেশ করা হলো।

মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পৃক্ততা :

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কোনো না কোনোভাবে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পৃক্ত এবং মুসলিমদের ইতিহাসের সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে—

(১) পৃথিবীর রাজনীতি অনেকটা তেল নির্ভর। তেল উৎপাদনকারী হিসেবে যেমন আমেরিকা ও রাশিয়া শীর্ষে আছে, ঠিক তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো শীর্ষে রয়েছে। একারণেই আমরা এই ইস্যুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঊদী আরবে সফর আর জো বাইডেনের বারংবার সঊদী আরব এবং আরব আমিরাতের যুবরাজদের কাছে ফোনকল দেখতে পেয়েছে।

(২) পাশাপাশি গ্যাস উৎপাদনে যেমন রাশিয়া শীর্ষে, ঠিক তেমনি কাতারও অন্যতম গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ। আর ইউরোপের সাথে রাশিয়ার অন্যতম সমস্যা হচ্ছে গ্যাস।

(৩) রাশিয়ার সরব উপস্থিতি আছে সিরিয়ার মাটিতে। বাশশার আল-আসাদের পক্ষে শক্ত অবস্থান রয়েছে তার। অন্যদিকে তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশের স্বার্থ রয়েছে সিরিয়াতে।

(৪) এই রাশিয়ার সাথে জড়িত আছে ককেশাস অঞ্চলের মুসলিমদের সাড়ে ৩০০-৪০০ বছরের রক্তস্নাত ইতিহাস। সুতরাং আমরা মুসলিম হিসেবে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের এই যুদ্ধকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারি না; বরং এই বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা করা এবং বুঝার চেষ্টা করা উচিত। সেই চিন্তাভাবনা এবং বোঝার চেষ্টা থেকেই আমাদের আজকের এই সংক্ষিপ্ত অবতারণা।

রাশিয়ার ইতিহাস :

আজকের যে রাশিয়া দাঁড়িয়ে আছে ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে, এই রাশিয়ার যদি আমরা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস টানি তাহলে নিকট অতীতে রাশিয়ার শাসনামলকে কয়েকভাগে ভাগ করতে পারি।

(১) জার শাসনামল : ‘জার’ শব্দের শাব্দিক অর্থ সম্রাট। মঙ্গোলিয়দের দখল থেকে রাশিয়াকে উদ্ধারের মাধ্যমে জার শাসনামলের শুরু হয়। জার শাসনামলের বিখ্যাত কয়েকজন শাসক হচ্ছেন— পিটার, ক্যাথরিন, আলেকজান্ডার প্রমুখ। জার শাসনামলে পরিবারকেন্দ্রিক এলিট শ্রেণির হাতে ছিল সর্বময় ক্ষমতা।

(২) বলশেভিক বিপ্লব : জার সাম্রাজ্যের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এবং জার্মানদের কাছে জার সাম্রাজ্যের পরাজয়ের কারণে রাশিয়ার জনগণ তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ১৯১৭ সালের সেই বিদ্রোহকে বলা হয় বলশেভিক বিপ্লব। এই বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে লেনিন এবং জোসেফ স্ট্যালিন-এর হাত ধরে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান হয়।

(৩) সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন : আমেরিকার সাথে স্নায়ুযুদ্ধ এবং বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতার দাবীর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। বিশেষ করে কম্যুনিজমের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মানুষকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম হয়।

পুতিনের ব্রেনে দুগিন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আদর্শিক ও ধর্মীয় কারণ :

আজকের রাশিয়াকে ভ্লাদিমির পুতিন কোন দৃষ্টিতে দেখছে এবং কোন পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগুচ্ছে? কী আদর্শে এবং কী সভ্যতা ও সংস্কৃতি তার অন্তরে লালন করছে? এটা জানা রাশিয়ার সামগ্রিক অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে অতীব জরুরী।

যখনই আমরা বর্তমান পুতিন যিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের ধ্বংসস্তুপের ওপর বর্তমান রাশিয়াকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি কী ম্যানিফেস্টো ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে এগুচ্ছেন তা জানতে পারব, তখন আমাদের সামনে অনেক স্ট্রাটেজি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

পুতিন ও বর্তমান রাশিয়ার আদর্শ বুঝার ক্ষেত্রে সবার আগে যে নামটি আসবে, তা হচ্ছে দার্শনিক আলেকজান্ডার দুগিন। যার লিখিত বই-পুস্তক সেনাবাহিনীর সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি স্কুল-কলেজের সিলেবাসেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আলেকজান্ডার দুগিনের যে বইটিতে বর্তমানে রাশিয়ার ম্যানিফেস্টো নামে প্রচার করা হয়, সেই বইয়ের নাম হচ্ছে ‘দি ফাউন্ডেশন অফ জিওপলিটিক্স : দি জিওপলিটিক্যাল ফিউচার অফ রাশিয়া’। এই বই সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হওয়ার আগেই আলেকজান্ডার দুগিন লিখেছিলেন। ২০০৫ সালে যখন আমেরিকার একটি অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, তখন আমেরিকার গবেষকরা বলেছিলেন, আশির দশকে লেখা এই বইয়ের প্রায় পনেরোটির মতো প্রস্তাব এখন পর্যন্ত পুতিন বাস্তবায়ন করে ফেলেছে। আলেকজান্ডার দুগিন আল-জাজিরায় কিছুদিন আগে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, সে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আজকে যদি কেউ গবেষণা করে এই বই পড়ে দেখে, তাহলে দেখবে যে, পুতিন ওই বইয়ের পঞ্চাশটির অধিক প্রস্তাব এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে ফেলেছে। এজন্য আলেকজান্ডার দুগিনকে বলা হয় ‘পুতিনের ব্রেন’।

আলেকজান্ডার দুগিন তার চোখের সামনে রাশিয়ায় তিন তিনটা শাসনের ধরন দেখেছেন। যেমন জার শাসনের কথা শুনেছেন, ঠিক তেমনি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপ্লব যেটাকে কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র আর আরবীতে শুয়ূঈ বলা হয়— সেটার উত্থান এবং পতন দেখেছেন। পাশাপাশি বর্তমান আধুনিক বিশ্বে আজকের ইউরোপ-আমেরিকা এবং আজকের ইসরাঈল যে সেকুলার দ্বীনের ধারক ও বাহক হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের দারস দেয় এবং যে পুঁজিবাদী অর্থনীতি সারা পৃথিবীতে প্রচার করে, সে পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও সেকুলারিজমও দুগিন দেখেছেন।

রাশিয়ার উত্থানের জন্য এবং রাশিয়ার ভবিষ্যতের জন্য আলেকজান্ডার দুগিন কমিউনিজম, সেক্যুলারিজম ও পুঁজিবাদ থেকে বের হয়ে নতুন একটা থিউরি দিয়েছেন। এই থিউরির যদি সারমর্ম আমরা উল্লেখ করি, তাহলে আমাদের আজ থেকে ১০০০ বছর আগে ফিরে যেতে হবে। নিম্নে তার আদর্শের সারর্মম পেশ করা হলো :

প্রথমত, বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য ও কুরআন-হাদীছে বর্ণিত রূম। আজ থেকে হাজার বছর আগে রাশিয়াতে একজন বাদশা ছিলেন, তার নাম হচ্ছে ভ্লাদিমির। এই ভ্লাদিমিরকে রাশিয়া ও রাশিয়ার আশেপাশে যত রাষ্ট্র আছে, সবাই অনেক পবিত্র এবং অনেক মহান মনে করে। তাকে মহান মনে করার কারণে তারাও নিজেদের নামের আগে ভ্লাদিমির লাগায়। যেমন পুতিনের নিজের নামের আগেও আছে ভ্লাদিমির। সেই মহান গ্রেট ভ্লাদিমির অর্থোডক্স খ্রিষ্টান ধর্মের দীক্ষা গ্রহণ করে অর্থোডক্স খ্রিষ্টান ধর্মকে সামনে রেখে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে রাশিয়াকে সংযুক্ত করে শাসনব্যবস্থা ক্বায়েম করেন। দুগিন থিউরির মূল দর্শন সেই বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং আমাদেরকে আগে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য কী, তা বুঝতে হবে।

ইতিহাস সাক্ষী, রোমান সাম্রাজ্য শাসনের সুবিধার্থে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ইতালির রাজধানী রোমকেন্দ্রিক একটা রোমান সাম্রাজ্য। আরেকটা রোমান সাম্রাজ্য তৈরি হয় আজকের তুরস্কের ইস্তাম্বুলকেন্দ্রিক, যাকে আরবীতে কুসতুনতুনিয়া এবং ইংরেজিতে কনস্টান্টিনোপল বলা হয়। কনস্টান্টিনোপলকে কেন্দ্র করে যে রোমান সাম্রাজ্য তৈরি হয়েছে, এটাকে বলা হয় বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য। এ দুটোর মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে- বাইজান্টাইনগণ অর্থোডক্স খ্রিষ্টান আর ইতালির রোমানগণ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান।

এই দুই রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধি, সবচেয়ে বেশি দীর্ঘ সময় টিকে থাকা এবং সবচেয়ে বেশি এলাকা শাসন করেছে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য। পবিত্র কুরআন ও হাদীছে যেখানে যেখানে ‘রূম’ ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের বাদশা হিরাক্লিয়াস যে রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন সেই অর্থোডক্স খ্রিষ্টানের রোমান সাম্রাজ্য উদ্দেশ্যে; ইতালির রাজধানী রোম উদ্দেশ্য নয়। এটা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, যেটা আমাদেরকে মনে রাখতে হবে।

আজকের আলেকজান্ডার দুগিন সেই বাইজান্টাইন শাসনব্যবস্থায় ফিরে যেতে চান। যেই রোমান এম্পায়ার অর্থোডক্স খ্রিষ্টানকেন্দ্রিক একটি ধার্মিক জাতীয়তাবাদী দেশীয় কৃষ্টি-কালচার দেশীয় সংস্কৃতিভিত্তিক গড়ে ওঠবে। এজন্য আরবী ভাষাভাষী বিশ্লেষকগণ এটাকে নব্য কায়ছার বলেছেন। আমরা জানি, আল্লাহর রাসূল a-এর যুগে পারস্য কিসরা ও রোমান কায়ছার ছিল। আজকের পুতিন সেই কায়ছার হতে চায়।

ক্যাথলিক ও অর্থোডক্স-এর মধ্যে পার্থক্য কী?

ক্যাথলিক ও অর্থোডক্সদের মধ্যে অনেক বিশ্বাসগত ধর্মীয় পার্থক্য রয়েছে, তার মধ্যে কিছু পার্থক্য নিম্নে পেশ করা হলো :

(১) বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অর্থোডক্স খ্রিষ্টানরা সব সময়ই হিব্রু ভাষা ব্যবহার করত আর ইতালির রোমের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরা সব সময়ই ল্যাটিন ভাষা ব্যবহার করে।

(২) ইতালির রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরুকে বলা হয় পোপ আর বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরুকে বলা হয় প্যাট্রিয়ক। ছহীহ বুখারীতে হিরাক্লিয়াসের লম্বা হাদীছে بطريق বলা হয়েছে। আজকের রাশিয়ার যিনি অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু, তাকেও প্যাট্রিয়ক নামেই সম্বোধন করা হয়।

(৩) যারা ইতালির রোমান সাম্রাজ্যের ক্যাথলিক খ্রিষ্টান তথা আজকের ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তারা বড়দিন পালন করে ২৫শে ডিসেম্বর। আর যারা বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অর্থোডক্স খ্রিষ্টান তথা আজকের অর্থোডক্স রাশিয়ার খ্রিষ্টান, তারা বড়দিন পালন করে ৭ জানুয়ারি।

(৪) অর্থোডক্সদের দাবি অনুযায়ী, যারা ক্যাথলিক খ্রিষ্টান তারা মূলত একজন ইয়াহূদী যে নিজে নামকাওয়াস্তে খ্রিষ্টান রূপ ধারণ করে খ্রিষ্টান ধর্মকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে, সেই বিকৃত ধর্মের অনুসারী। আর অর্থোডক্সরা নিজেদেরকে মূল খ্রিষ্টান ধর্মের মূল ধারার অংশ মনে করে।

(৫) বর্তমান পৃথিবীতে ক্যাথলিক খ্রিষ্টান এবং অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য চোখে পড়ে, সেটা হচ্ছে- অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের পরিবার প্রথা, দেশীয় কৃষ্টি-কালচার ও ধর্ম-কর্মের প্রতি বেশি আগ্রহ।

আলেকজান্ডার দুগিন সম্পূর্ণরূপে কমিউনিজম থেকে রাশিয়াকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কমিউনিজম হচ্ছে ধর্মহীনতা এবং ধর্মবিরোধিতা, সেখান থেকে দুগিনের নতুন থিউরি দিয়ে পুরো রাশিয়াকে একটা ধর্মকেন্দ্রিক দেশে পরিণত করার চেষ্টা করেছে। যেটার ভিত্তি থাকবে অর্থোডক্স খ্রিষ্টান। যেটার ভিত্তি থাকবে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য। পুতিনও ওই আদর্শে বিশ্বাস করে একটা ধর্মকেন্দ্রিক রাশিয়াকে গড়ে তুলছেন। সুতরাং সোভিয়েত ইউনিয়নের রাশিয়া এবং আজকের রাশিয়ার মধ্যে আসমান-যমীন পার্থক্য আছে। বিশ্বাসগত এবং আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে এবং নিকট অতীতে রাশিয়া যে যুদ্ধগুলো পরিচালনা করেছে তার প্রত্যেকটির পিছনে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে ফিরে যাওয়ার সেই মূল ইচ্ছাটা ধরা পড়বে।

আলেকজান্ডার দুগিন তার লিখিত বইয়ে নিশ্চিতভাবে বলেছিলেন যে, ক্রিমিয়া দখল করতে হবে। তিনি ইউক্রেন দখলের বিষয়েও তার বইয়ে পরামর্শ দিয়েছেন অনেক আগেই। তিনি লিখেছেন, রাশিয়ার রেনেসাঁ থামাতে পারে একমাত্র ইউক্রেন। সুতরাং ইউক্রেন ও ক্রিমিয়াকে দখল করা ছাড়া রাশিয়ার এই রেনেসাঁ পূর্ণতা পাবে না। এভাবে আশির দশকে তার উল্লেখিত বইগুলোতে আলেকজান্ডার দুগিন লিখেছেন।

দ্বিতীয়ত, দুগিনের আরও একটি বই রয়েছে ‘দি ফোর্থ পলিটিকাল থিউরি’ নামে। উক্ত বইয়ে তিনি তার থিউরিকে চর্তুথ পলিটিক্যাল থিউরি বলেছেন। এই থিউরির মূল ম্যানিফেস্টো হচ্ছে American liberalism must be destroyed. তথা আমেরিকার যে লিবারেজম ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ আছে, এটাকে যেকোনো মূল্যে ধ্বংস করতে হবে। প্রোজায়নিজম ইয়াহূদীবাদকেন্দ্রিক যে অর্থনীতির ব্যবস্থা আছে, সমগ্র পৃথিবীতে এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিতে হবে। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধূলিস্যাৎ করে দিতে হবে। তার এই থিউরির পক্ষে যুক্তি হিসেবে আলেকজান্ডার দুগিন আল-জাজিরা চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে এটাও বলেছেন, লিবারেলিজম তথা ধর্মনিরপেক্ষতার ধোঁয়া দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবাধিকারের নামে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে সংখ্যালঘুদের কাছে অসহায় করে ফেলে। দুগিনের দাবি হচ্ছে, মানুষের মানবাধিকার নির্ধারিত হবে তার ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে। ধর্ম থেকে আলাদা কোনো মানবাধিকার নেই। সমাজে যে কাজটা অগ্রহণযোগ্য ও অপছন্দনীয়, মানবাধিকারের নামে তাকে সেই কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে- এটার আমরা সম্পূর্ণরূপে বিরোধিতা করি। সামাজে ও ধর্মে সমকামিতা ঘৃণিত হয় এবং সমাজে যদি যেনা-ব্যভিচার ঘৃণিত হয়, তাহলে মানবাধিকারের নামে সমকামিতার সুযোগ দেওয়া হবে না। মানবাধিকারের নামে তাকে যেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হতে দেওয়া হবে না।

যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে একটি দেশকে তার নিজ দেশীয় সংস্কৃতি এবং নিজ ধর্মীয় সংস্কৃতিকে কোণঠাসা করে, আমরা সেই সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে। তথা দুগিন ধর্মভিত্তিক রক্ষণশীল নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতিভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাস করেন। তার এই থিউরিগুলোর মাধ্যমে রাশিয়ার ঐক্যকে মযবূত ও শক্তিশালী করতে চেয়েছেন। মানুষকে এক আদর্শের উপর একত্রিত করতে চেয়েছেন। যাতে এখন পর্যন্ত দুগিন ও পুতিন অনেকটাই সফল।

(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

ফাযেল, দারুল উলূম দেওবান্দ, ভারত; এম. এ. (অধ্যয়নরত), উলূমুল হাদীছ বিভাগ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর..
জনপ্রিয় পোস্ট
সর্বশেষ আপডেট