প্রশ্ন (১) : আমাদের এলাকাতে ঈদগাহে শামিয়ানা টাঙানো হয় এবং ইদগাহ সুন্দরভাবে সাজানো হয়। এটি কি শরীয়তসম্মত?
-মাহফুজুর রহমান
রাজশাহী।
উত্তর : উক্ত কাজটি শরীয়তসম্মত নয়। ঈদের ছালাত ফাঁকা জায়গায় ও উন্মুক্ত স্থানে আদায় করাই সুন্নাত। কেননা মসজিদে নববীর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেখানে ছালাত আদায় করলে অন্য মসজিদের চেয়ে এক হাজার গুণ নেকি বেশি হয়। তারপরেও তিনি সেখানে ছালাত আদায় না করে প্রায় ৫০০ গজ দূরে গিয়ে খোলা ময়দানে উন্মুক্ত স্থানে ছালাত আদায় করেন (ছহীহ বুখারী, হা/৯৫৬)। এসব হাদীছ স্পষ্ট প্রমাণ করে যে, রোদ-বৃষ্টির কারণে শামিয়ানা ঈদের মাঠে টাঙানো যাবে না এবং ঈদের মাঠকে সাজানো যাবে না। কেননা এটি একটি নব আবিষ্কৃত বিষয়। আর রাসূল a বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮)।
প্রশ্ন (২) : হাদীছ থেকে জানা যায়, রাসূল a সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়ে দুই হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে সারা শরীর মাসাহ করতেন। কিন্তু অনেকে বুকে ফুঁ দেয়। এক্ষণে সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়ে বুকে ফুঁ দেওয়া যাবে কি?
-মিনহাজ পারভেজ
নাটোর।
উত্তর : সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়ে বুকে ফুঁক দেওয়ার বিষয়টি কোন ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। তাই এই আমল বর্জন করতে হবে। রাসূল a বলেছেন, ‘কেউ যদি এমন আমল করে যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই তাহলে সেটি প্রত্যাখ্যাত’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮)। তবে বুকে নয়, রোগ ব্যাধির জন্য সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়ে শরীরে ফুঁক দিতে পারে।
প্রশ্ন (৩) : ‘ইমাম আবূ হানিফা p আল্লাহকে ৯৯ বার দেখেছেন’ মর্মে বর্ণিত কাহিনী কি সত্য?
-মো. তুহিন ইসলাম রাতুল
গাজীপুর।
উত্তর: উক্ত ঘটনাটি বানোয়াট যার কোন বিশুদ্ধ ভিত্তি নেই। সুতরাং একজন সম্মানিত ইমাম সম্পর্কে এধরনের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া কোন মুসলিমের জন্য আদৌ জায়েয নয়। কেননা এই চক্ষু দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখতে পারবে না। আল্লাহ বলেন, ‘দৃষ্টিসমূহ তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না, অথচ তিনি সকল দৃষ্টিকে আয়ত্ব করেন এবং তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত’ (আল-আন‘আম, ৬/১০৩)। মূসা e যখন আল্লাহকে দেখতে চাইলেন, তখন আল্লাহ বললেন, ‘কখনই (দুনিয়াতে) তুমি আমাকে দেখতে পাবে না’ (আল-আরাফ, ৭/১৪৩)। সুতরাং ইমাম আবূ হানীফা সম্পর্কে এই ধরনের মিথ্যা কাহিনী বর্ণনা করা হতে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
প্রশ্ন (৪) : ঈদের ছালাত আদায়ের পূর্বে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে কি?
-আকীমুল ইসলাম
জোতপাড়া, ঠাকুরগাঁও।
উত্তর : না, ঈদের ছালাতের পূর্বে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। এমনকি কোনো ক্বিরাআত, গযল, সঙ্গীত কিছুই বলা যাবে না। বরং প্রথমে ছালাত আদায় করতে হবে। অতঃপর খুৎবা দিতে হবে। আবূ সাঈদ খুদরী c বলেন, নবী a ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহের দিকে বের হতেন এবং সেখানে প্রথমে যা করতেন তা হলো ছালাত। অতঃপর জনতার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন আর জনতা তখন নিজেদের কাতারে বসা থাকত। তিনি তাদেরকে উপদেশ দিতেন, নছীহত করতেন এবং নির্দেশ দিতেন। আর যদি কোথাও সৈন্য প্রেরণের ইচ্ছা করতেন তাদেরকে বাছাই করতেন অথবা যদি কাউকে কোনো নির্দেশ দেওয়ার থাকত, নির্দেশ দিতেন। অতঃপর বাড়ি ফিরে যেতেন (ছহীহ বুখারী, হা/৯৫৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯৪; মিশকাত, হা/১৪২৬)। উল্লেখ্য যে, ঈদের ছালাতের পূর্বে খুৎবা দেওয়ার প্রচলন শুরু করেন মারওয়ান ইবনু হাকাম (ছহীহ মুসলিম, হা/৪৯)। তখন প্রখ্যাত ছাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী a তার সেই কাজের প্রতিবাদ করেছিলেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৯৫৬)। সুতরাং খুৎবার পূর্বে কোন বক্তব্য দেওয়া চলবে না, বরং আগে ঈদের ছালাত আদায় করতে হবে।
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ। আভাস মাল্টিমিডিয়া.কম এ ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ ঈমান ও আমলের দাওয়াতী ওয়েবসাইট। এটি সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত এবং কোন প্রকার দল / সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত নয়। আমাদের আক্বীদাহ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদাহ। আমাদের মানহাজ সালাফে সালেহীনদের মানহাজ। আমাদের দাওয়াত শিরকমুক্ত, কুফরমুক্ত, নিফাক্বমুক্ত ও বিদ‘আতমুক্ত ঈমান ও আমলের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাওহীদ ও সুন্নাত ভিত্তিক ঈমান ও আমল গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
Leave a Reply