প্রশ্ন (১) : কাজী অফিসে গিয়ে আমি বিয়ে করি, আমার বিয়ের সাক্ষী থাকে আমার বন্ধু ও তার স্ত্রী। আরো সাথে ছিলেন কাজীর সাথের এক ব্যক্তি। আমার শ্বশুর বেঁচে নেই, তাই আমার স্ত্রী তার মায়ের অনুমতি নিয়ে আমার সাথে বিয়ে বসে। আমি জানতে চাই আমাদের বিয়ে কি ইসলাম মোতাবেক হয়েছে?
-মো. তোয়াছিন
চাঁদপুর।
উত্তর : কোনো নারী বিবাহের অভিভাবক হতে পারবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ a বলেন, ‘কোনো নারী অন্য কোনো নারীকে বিবাহ দিতে পারে না এবং কোনো নারী নিজেও বিবাহ করতে পারে না। যে নারী নিজে বিবাহ করে সে ব্যভিচারিণী’ (ইবনু মাজাহ, হা/১৮৮২; মিশকাত, হা/৩১৩৭)। অভিভাবক ছাড়াই যেহেতু এই বিবাহ হয়েছে তাই এটি শরীয়তসম্মত হয়নি। আবূ মূসা আশআরী c নবী করীম a হতে বর্ণনা করেন যে, অভিভাবক ব্যতীত বিবাহ শুদ্ধ হবে না (তিরমিযী, হা/১১০১; আবূ দাঊদ, হা/২০৮৫; ইবনু মাজাহ, হা/১৮৮১, মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৭৪৬; মিশকাত, হা/৩১৩০)। রাসূলুল্লাহ আরো বলেছেন, অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোনো নারী বিবাহ করলে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল (আবূ দাউদ, হা/২০৮৩, তিরমিযী, হা/১১০২)। এক্ষেত্রে মেয়ের দাদা অভিভাবক হবে, দাদা না থাকলে নিজ ভাই এভাবে তার নিকটাত্মীয়গণ অভিভাবক হবে (আশ-শারহুল মুমতে‘, ১২/৮৪ পৃ.)।
প্রশ্ন (২) : বিবাহে মেয়েকে কবূল বলানো কি শরীয়তসম্মত?
-মাহফুজ
রাজশাহী।
উত্তর : কনেকে কবূল বলাতে হবে না। কেননা কনেকে কবূল বলাতে হবে মর্মে কুরআন ও হাদীছে কোন দলীল পাওয়া যায় না। বরং বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়ের অভিভাবক তার সম্মতি নিয়ে বিবাহের মজলিশে দুই সাক্ষীর উপস্থিতিতে বরকে বলবে, আমি আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে রাজী, তুমি তাকে স্ত্রী হিসেবে কবূল করো। তখন বর বলবে, আমি কবূল করলাম। এতেই বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। বিবাহের মজলিশে খুতবা দেওয়া সুন্নাত। রাসূল a বলেছেন, কোনো বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিবাহ দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দিতে পারবে না। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে? তিনি বললেন, চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি (ছহীহ বুখারী, হা/৫১৩৬, ৫১৩৭)। সুতরাং সমাজে প্রচলিত কনের কাছে দুই সাক্ষী নিয়ে গিয়ে তাকে কবূল বলানোর প্রথা বর্জন করতে হবে।
প্রশ্ন (৩) : বিবাহের সময় ছেলে-মেয়েদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা যাবে কি?
-মতিউর, ঢাকা।
উত্তর : না, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা যাবে না। কেননা এগুলো বিজাতীয়দের থেকে আগত কুসংস্কার। আর বিজাতীয়দের সাদৃশ্য অবলম্বন করা সম্পূর্ণভাবে হারাম। রাসূলুল্লাহ a বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি সেই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে (আবূ দাউদ, হা/৪০৩১)। সুতরাং গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকতে হবে। তবে অনুষ্ঠান ছাড়াই বর-কনে গায়ে হলুদ দিতে পারে যা খালা, ফুফু, দাদী, নানী ও নিজ বোনেরা বাস্তবায়ন করবে। একদা রাসূল a আব্দুর রহমান ইবনু আউফের শরীরে হলুদ চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, ‘তুমি কি বিবাহ করেছ’ (আবূ দাউদ হা/২১০৯)। এতে বুঝা যায়, বর-কনে উভয়েই গায়ে হলুদ দিতে পারে। তবে প্রচলিত যুবতী মেয়েদের মাধ্যমে হলুদ মাখার অনুষ্ঠান অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
প্রশ্ন (৪) : একজন পুরুষের বিবাহ না হলে তার চরিত্র রক্ষা করা কঠিন হচ্ছে। কিন্তু তার পিতামাতা তাকে বিবাহ দিতে চাচ্ছে না। তারা চাচ্ছে সে আরো পড়াশোনা করুক, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক। তাদের তেমন ইসলামের জ্ঞান নেই আর তারা তেমন দ্বীনদারও না। এমতাবস্থায় সেই ছেলে কি তার পিতা মাতার ইচ্ছার বাহিরে একা কোথাও বিবাহ করতে পারবে? হাদীছে তো বর্ণিত আছে, পিতা মাতার অবাধ্যতা হারাম।
-নিয়াজ মোরশেদ
কালকিনি, মাদারীপুর।
উত্তর : চরিত্র রক্ষা করার জন্য বিবাহ করা এবং পিতা-মাতার আনুগত্য করা উভয়টিই অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এক্ষেত্রে শরীয়তে বিবাহের গুরুত্বের বিষয়টি পিতা-মাতাকে বুঝাতে হবে এবং যথাসম্ভব তাদেরকে বুঝিয়ে ও রাজী করে তাদের মতে বিবাহ করতে হবে। আর যদি একান্তই তারা বিবাহ দিতে রাজী না হয় তাহলে তাদের প্রতি সদাচরণ এবং তাদেরকে সাধ্যমতো সন্তুষ্ট রেখে ছেলে বিবাহ করে নিজের চরিত্রের সুরক্ষা করবে। আবূ সাঈদ ও ইবনু আব্বাস h হতে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ a বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কোনো সন্তান (ছেলে বা মেয়ে) জন্মগ্রহণ করে, সে যেন তার উত্তম নাম রাখে। আর (উত্তম) আচার-আচরণ শিক্ষা দেয় এবং যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হয় তখন যেন তার বিয়ে দেয়। বয়ঃপ্রাপ্তির পর যদি বিয়ে না দেয় এবং ঐ সন্তান যদি কোনো পাপ করে, তবে ঐ পাপের বোঝা পিতার ওপর বর্তাবে’ (মিশকাত, হা/৩১৩৮)।
Leave a Reply