ইবলিশ কোন শয়তানের প্ররোচনায় আদম আ. কে সেজদা দেওয়া থেকে বিরত ছিলো?
ইবলিশ কোন শয়তানের প্ররোচনায় আদম আ. কে সেজদা দেওয়া থেকে বিরত ছিলো?
প্রশ্ন : সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর জানতে চাই। আশা করি উত্তর দিয়ে বাধিত করবেন ইনশাআল্লাহ। প্রশ্নটি হল, ইবলিস যখন ‘শয়তান’ হয়নি তখন তার অন্তরে কোন শয়তান কুমন্ত্রণা দিলো আদম আলাইহি সালাম-কে সেজদা করার ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে?”
উত্তর:
এর উত্তর হল, কু প্রবৃত্তি। ইবলিস তার অন্তরের কু প্রবৃত্তির কারণে আত্ম-অহংকারী হয়ে উঠেছিল। ফলে সে আল্লাহর হুকুম অমান্য করার দু:সাহস দেখিয়েছিল।
আলেমগণ বলেন, মানুষ এবং জিন সম্প্রদায় তাদের অন্তরের দুষ্ট প্রবৃত্তির কারণেও আল্লাহর হুকুম অমান্য করে এবং পাপাচারে লিপ্ত হয়। এই দুষ্ট প্রবৃত্তিকে কুরআন ও হাদিসের ভাষায়‘ হাওয়া’ هوى (প্রবৃত্তি/রিপু) ও ‘নফসে আম্মারা’ النفس الأمارة (মন্দ প্রবণ মন) বলা হয়েছে।
إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ
“নিশ্চয় নফস (মন) মন্দ কর্ম প্রবণ।” [সূরা ইউসুফ: ৫৩]
◍ মহান আল্লাহ কুরআনের বহু স্থানে দুষ্ট প্রবৃত্তির অনুসরণের ব্যাপারে সতর্ক করে তার কু পরিণতির কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন: তিনি বলেন,
وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ
“আর তুমি প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। অন্যথায় তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে।” [সূরা স্ব-দ: ২৬]
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ هَوَاهُ بِغَيْرِ هُدًى مِّنَ اللَّهِ
“তার চাইতে আর কে বেশি পথভ্রষ্ট যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আল্লাহ্র কাছ থেকে পথ নির্দেশ ব্যতিরেকে?” [সূরা কাসাস: ৬০]
এ ছাড়াও মহান আল্লাহ কুরআনের একাধিক আয়াতে কু প্রবৃত্তির অনুসরণের নিন্দা করেছেন। দেখুন, সূরা আনআম-এর ১১৯ নং, সূরা জাসিয়া-এর ১৮ নং, সূরা বাকারা-এর ১৪৫ নং, সূরা নিসা-এর ১৩৫ নং আয়াত ইত্যাদি।
◍ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ثَلَاثٌ مُهْلِكَاتٌ شُحٌّ مُطَاعٌ وَهَوًى مُتَّبَعٌ وَإِعْجَابُ الْمَرْءِ بِنَفْسِهِ وَهِيَ أَشَدُّهُنَّ
“তিনটি জিনিস ধ্বংস সাধনকারী: লোভের দাস হওয়া, প্রবৃত্তির অনুসারী হওয়া এবং আত্মতৃপ্তিতে ভোগা। আর এটিই হল, সবচেয়ে মারাত্মক।”
[বায়হাকি, শুআবুল ঈমান হা/৭৪৫, মিশকাত হা/৫১২২; সহীহ তারগীব হা/৫০, সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৮০২। শাইখ আলবানি বলেন, এর সনদ হাসান লি গাইরিহ। দেখুন: তাখরিজ মিশকাতুল মাসাবীহ, হা/ ৫০৪৯]
শয়তান যেমন আল্লাহর নাফরমানির প্রতি প্রতিনিয়ত প্ররোচিত করে তেমনি রিপু ও দুষ্ট প্রবৃত্তি আমাদেরকে প্রতিনিয়ত সে দিকে প্রলুব্ধ করতে থাকে। তাই তো এই প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করাকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘শ্রেষ্ঠ জিহাদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
أفضلُ الجهادِ أن يُجاهدَ الرَّجلُ نَفسَه وهواهُ
“মন ও প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ করাই হল, শ্রেষ্ঠ জিহাদ।” [শাইখ আলবানি রহ. এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দেখুন: সহিহুল জামে, হা/১০৯৯]
শুধু তাই নয়। তিনি নফসের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন:
◍ হাদিসে নিম্নোক্ত দুআটি বর্ণিত হয়েছে,
اللَّهُمَّ قِنِي شَرَّ نَفْسِي
“হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আমার নফসের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন।” [নাসাঈ, হাকিম প্রমুখ। ইমাম হাকেম বলে, এটি শাইখাইন তথা বুখারি ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহিহ। ইমাম জাহাবি তাতে সম্মতি দিয়েছেন।]
এ ছাড়াও বহু হাদিসে প্রবৃত্তির অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার পাশাপাশি তার অনুসরণের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।
মানুষ ও জিন যে, তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণে আল্লাহর নাফরমানি করে তার প্রমাণ হল, মহান আল্লাহ নির্দেশ স্বত্বেও ইবলিশের আদম আলাইহিস সালামকে সেজদা দেওয়া থেকে বিরত থাকা। কেননা ইবলিস আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দা হওয়া স্বত্বেও তার কু প্রবৃত্তি তাকে অহংকারী করে তুলেছিল। সে কারণে সে আদম আ.কে সেজদার নির্দেশের সামনে অহংকারের বশবর্তী হয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেছিলো।
◍ মহান আল্লাহ এ ব্যাপারটি কুরআনে উল্লেখ করেছেন:
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ ۖ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ
“আল্লাহ বললেন, আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কীসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বলল, আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।” [সূরা আরাফ: ১২] অর্থাৎ তার কু প্রবৃত্তি তাকে অহংকারী করে তুলল এবং আল্লাহর হুকুমের সামনে যুক্তি প্রদর্শন করে আল্লাহর অবাধ্যতা করলো।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শয়তানের কুপ্ররোচনা এবং কু প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে হেফাজত করুন। কেননা, তা নিশ্চিত ধ্বংসের পথ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী।
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।