“প্রেস বিজ্ঞপ্তি”
গত ০৬/০৩/২০২৩ তারিখ দিনাজপুর জেলা ষ্টেডিয়ামের পূর্ব উত্তর দিকে ১ম গেইট সংলগ্ন গ্যালারির নিচে, টয়লেটের পিছনে ময়লা আবর্জনার আড়ালে অর্ধগলিত অবস্থায় অজ্ঞাত লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদ পাওয়া মাত্রই কোতয়ালী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে, লাশ সনাক্তের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। উল্লেখ্য যে, গত ০৫/০৩/২০২৩ তারিখ রাত্রী ১২.০০ ঘটিকার পর মোঃ শাহরিয়ার আলম অত্র থানায় একটি নিখোজঁ জিডি করেন। যেখানে তার ছোট ভাই শাহরিন আলম বিপুল(১৮) গত ০৪/০৩/২০২৩ তারিখ হতে নিখোঁজ হয়েছেন উল্লেখ করে। জিডির সূত্র ও বাদীর সনাক্তমতে লাশটি দিনাজপুর সিটি কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্র মোঃ শাহরিন আলম বিপুলের বলে নিশ্চিত হয়। সুরতহাল প্রস্তুতকালে এটিকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড ধরে নিয়ে দ্রুত ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরন করা হয়। একই দিন ভিকটিমের বড় ভাই মোঃ শাহারিয়ার আলম বাদী হয়ে ০১ জনকে এজাহার নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় মামলা নং-২২/১৯১, তারিখঃ ০৬/০৩/২০২৩ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ দায়ের করেন।
মামলা রুজুর পরপরই দিনাজপুর জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব শাহ ইফতেখার আহমেদ, পিপিএম মহোদয়ের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে থানা পুলিশের একটি চৌখশ দল অভিযান শুরু করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব মোঃ মমিনুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) জনাব আব্দুল্লাহ আল মাছুমের সমন্বিত পরিকল্পনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল জনাব শেখ মোঃ জিন্নাহ আল মামুন এর নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ কোতয়ালী থানা জনাব মোঃ তানভিরুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ গোলাম মাওলা শাহ্ এবং তদন্তকারী অফিসার এসআই(নিঃ) মোঃ শামীম হক এর অংশগ্রহণে অভিযান শুরু হয়।
হত্যাকান্ডের পর থেকেই এজাহার নামীয়সহ অপরাপর আসামীরা আত্নগোপনে চলে যায়। অভিযান টিমের ধারাবাহিক কার্যক্রম ও প্রযুক্তির সহায়তায় এজাহার নামীয় আসামী ১। মোঃ দেলোয়ার হোসেন, পিতা-মোঃ রশিদ, মাতা-দিলারা পারভীন, গ্রাম-শালকী (বোয়ালমারী), থানা-দিনাজপুর সদর, জেলা-দিনাজপুরকে গ্রেফতার করা হয়। প্রথমে এজাহার নামীয় আসামী গ্রেফতার করে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপরাপর সহযোগী আসামী ২। মোঃ শাকিব শাহরিয়ার, পিতা-মোঃ উজ্জল হোসেন, সাং-উপশহর ০৬ নং পুরাতন পাওয়ার হাউজ, ৩। মোঃ আশরাফুল হোসেন মিলন, পিতা-মোঃ আফজাল হোসেন, সাং-নিশ্চিন্তপুর ৪। মোঃ আসিফ মাহমুদ হৃদয়, পিতা-মোঃ হামিদুর রহমান, সাং-হাউজিং মোড় (০৭ নং নিউটাউন) সকলে থানা-কোতয়ালী, জেলা-দিনাজপুরকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামী মোঃ দেলোয়ার হোসেন, পুরভী (ছদ্ম নাম) নামের এক মেয়েকে পছন্দ করে। কিছুদিন সম্পর্ক করার পর পুরভীর ভিকটিম বিপুলের সাথে সক্ষতা হয়। দেলোয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলোনা। সে বিপুলকে সরাসরি টার্গেট করে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। প্রথমে তারা বিপুলকে পর্যবেক্ষন শুরু করে। বিপুলের ফেইসবুক হতে তার ছবি তোলার শখটি চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। আর এটাকেই তারা কৌশল হিসেবে বেছে নেয়। গত ০১/০৩/২০২৩ তারিখে Sakib Ahmed Suvo নামে ভুয়া ফেইসবুক একাউন্ট খুলে ভিকটিমের সাথে চ্যাটিং শুরু করে। ছবি তোলার বিষয়ে মেসেঞ্জারে মেসেজ আদান প্রদান চলতে থাকার এক পর্যায়ে ভিকটিমকে ০৬ (ছয়) দিনের জন্য ক্যামেরা ধার দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। মাত্র ০৩ (তিন) দিনের কথপোকথনে অপরাধীরা ভিকটিমের মনে বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হয়। তাদের কথাবার্তা বিশ্বাস করে ভিকটিম তাদের ফাঁদে পা দেয়। তাকে বলা হয়, জেলা স্কুলে অধ্যায়নরত শামীম রেজা সাগর (ছদ্ম নাম) নামে একজন ০৪/০৩/২০২৩ তারিখ সকালে ০৯.০০ ঘটিকার সময় স্টেডিয়ামের ০১ নং গেটে ক্যামেরা নিয়ে অপেক্ষা করবেন বলে জানান। ঘটনাস্থলে আসার জন্য ০১ নং আসামী দেলোয়ার ভিকটিমকে ১০০ টাকা বিকাশ করে। ভিকটিম সরল বিশ্বাসে স্টেডিয়ামের ০১ নং গেটে গেলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা দেলোয়ার, শাকিল ও সাগর এবং আসিফসহ অজ্ঞাতনামা ১/২ জন সহযোগী আসামী ভিকটিমকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। ভিকটিম প্রতিবাদ জানালে তর্কা তর্কি শুরু হয়। এরই এক পর্যায়ে মাথার পিছনে ও গলায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে, লাশ ময়লা আবর্জনা দিয়ে ঢেকে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। একই সাথে তারা ভিকটিমের মোবাইল হেফাজতে নেয়। তাদের মোবাইল হতে চ্যাটিং ডিলেট করে উক্ত Sakib Ahmed Suvo নামীয় ফেইসবুক একাউন্ট ডি-এক্টিভেট করে দেয়। তারা ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে অত্যান্ত কৌশলের আশ্রয় নিলেও অভিযান দলের কৌশলের কাছে পরাস্থ হতে বাধ্য হয়েছে। তাদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ প্রক্রিয়াধীন।
অভিযানে মোট ০৪ জন গ্রেফতার হন এবং একই সাথে উক্ত আসামীদের নিকট হতে যথাক্রমে-
১। একটি R15-১৫৫ সিসি মেট ব্ল্যাক+কালো রংয়ের মোটরসাইকেল।
২। ০৪টি এন্ড্রোয়েট মোবাইল ফোন।
আইসিটি এন্ড মিডিয়া সেল
দিনাজপুর।