শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫১ অপরাহ্ন

পহেলা বৈশাখ পালনের বিধান এবং এ উপলক্ষে সরকারী নির্দেশে আমাদের করণীয়।
Kaji Asad Bin Romjan / ১০৩ কত বার
আপডেট: রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৪
প্রশ্ন: ‘পহেলা বৈশাখ’ উপলক্ষে পান্তা-ইলিশ খাওয়া যাবে কি? বর্তমান সরকার এ উৎসব উপলক্ষে ছাত্র/ছাত্রী ও শিক্ষকদেরকে স্কুল-কলেজে উপস্থিত থাকা ও তা পালন করা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
উত্তর:
ইসলামে মুসলিমদের জন্য দুটি জাতীয় উৎসবের দিন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একটি হল, ঈদুল আজহা অপরটি হল, ঈদুল ফিতর। এ দুটি ছাড়া মুসলিমদের জন্য ৩য় কোন আনন্দ-উৎসব জাতীয়ভাবে উদযাপন করার সুযোগ নেই।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখলেন, মদিনা বাসী খেলা-ধুলার মধ্য দিয়ে দুটি দিবস উদযাপন করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিবস কী?
তারা বলল, এ দুটি দিবস জাহেলি যুগে আমরা খেলা-ধুলার মধ্য দিয়ে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন,
إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ
“আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। একটি হল, ঈদুল আজহা এবং অপরটি হল, ঈদুল ফিতর।” [সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং ৯৫৯ সনদ-সহীহ, আলবানি]
উপরোক্ত হাদিস থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইসলামি শরিয়তে ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর ব্যতিরেকে জাতীয়ভাবে তৃতীয় কোন ঈদ বা উৎসব পালনের সুযোগ নেই। অথচ দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের মুসলিম সমাজে বর্তমানে কত ধরণের ঈদ-উৎসব জমজমাট ভাবে পালন করা হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। যেমন: ঈদে মিলাদুন নবী বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম উৎসব। বরং এটাকে ‘সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ বলে জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদিসের সুস্পষ্ট বিরোধী। অনুরূপভাবে তথাকথিত পহেলা বৈশাখ, খৃষ্ট নববর্ষ, এপ্রিল ফুল, বড় দিন (Xmas Day) ইত্যাদি অগণিত উৎসব আমদের মুসলিমগণ অবলীলায় পালন করে যাচ্ছে কিন্তু একবারও চিন্তা করে দেখে না যে, আসলে এগুলোর উৎস কোথায়? এসব মূলত: হিন্দু ও খৃষ্টানদের থেকে আমদানিকৃত সংস্কৃতি যার সাথে মুসলমানের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-বলে গেছেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” [আবু দাউদ হাদিস নং ৩৫১২, সনদ-সহীহ, আলবানী]
সুতরাং আমাদের সমাজে ইদানীং পহেলা বৈশাখ পালনের যে মহা আয়োজন দেখা যাচ্ছে এর সাথে মুসলিমদের কোন সম্পর্ক নেই। বরং এ সব অনুষ্ঠান উপলক্ষে যা কিছু দেখা যাচ্ছে সেগুলো অধিকাংশ হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির সাথে সংগতিপূর্ণ।
তাই এ উপলক্ষে কোন ধরণের অনুষ্ঠান করা, শুভেচ্ছা বিনিময় করা, কথিত প্রভাত ফেরী ও মঙ্গল শোভা যাত্রায় অংশ গ্রহণ করা, পান্তা-ইলিশ খাওয়া ইত্যাদি- এ সব জাহেলিয়াত পূর্ণ কাজ। এগুলোতে কোন মুসলিম সন্তানের অংশ গ্রহণ করা বৈধ নয়।
সরকার যদি অন্যায় ভাবে মুসলিমদের উপর কোন অনৈসলামিক অনুষ্ঠান চাপিয়ে দেয় তাহলে তা মান্য করা যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
“স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না।” [মুসনাদ আহমদ-সহীহ] বরং আইন সঙ্গত পন্থায় তার প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু যদি প্রতিবাদ করার ক্ষমতা না থাকে বা অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ না করলে জান-মালের ক্ষতির আশংকা থাকে তাহলে ঘৃণা সহকারে তাতে অংশ গ্রহণ করা যাবে। এটুকু হল ঈমানের সর্ব নিম্ন আলামত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহীহ হাদিসে বলেছেন,
«مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ»
“তোমাদের মধ্যে যে অন্যায় দেখবে সে যেন তা তার হাত দিয়ে বাধা দেয়, আর যদি হাত দিয়ে বাধা না দিতে পারে তবে যেন মুখ দিয়ে বাধা দেয়, আর যদি মুখ দিয়ে বাধা না দিতে পারে তবে যেন অন্তর দিয়ে বাধা দেয়, আর এটি হলো দুর্বল ঈমানের পরিচয়।” [সহিহ মুসলিম, হা/৪৯]
আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের বিজাতীয় সংস্কৃতি ও অন্ধ অনুকরণ থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর..
জনপ্রিয় পোস্ট
সর্বশেষ আপডেট