1. admin@avasmultimedia.com : Kaji Asad Bin Romjan : Kaji Asad Bin Romjan
আহলে হাদীস সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করুন - Avas Multimedia
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন

আহলে হাদীস সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করুন

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশের সময়ঃ রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১
  • ৫৯১ বার দেখেছে

আহলে হাদীস সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করুন
__________________________________________
একশ্রেণীর মানুষেরা মনে করেন, আহলে হাদীস মানে হচ্ছে “মুহাদ্দিস”, অর্থাৎ হাদীসের আলেম বা হাদীস সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ। আগের যুগে আহলে হাদীস বলতে এমন বড় আলেমদেরকে বুঝানো হতোঃ
– যিনি লক্ষ লক্ষ হাদীস মুখস্থ করেছেন,
– হাদীস সহীহ নাকি জয়ীফ এনিয়ে গবেষণা ও তাহক্বীক্ব করেন।
– এক কথায় যারা হাদীস চর্চা করেন।
তাদের ভাষ্য হচ্ছে, আগের যুগে আলেম নন এমন কোন সাধারণ মুসলমান নিজেকে আহলে হাদীস বলে পরিচয় দিতোনা। সাধারণ মুসলমানদের আহলে হাদীস হিসেবে পরিচয় দেওয়া পাক-ভারত উপমহাদেশে নতুন একটা বিষয়।
__________________________________________
আহলে হাদীস সম্পর্কে এমন ভুল ধারণার কারণে আমি সাধারণ মানুষকে দোষারোপ করিনা বা মন্দ বলিনা। কেননা বাংলাদেশের আলেম, ইসলামী বক্তা বা জনপ্রিয় লেখকদের মাঝেই আহলে হাদীস জামআ’ত এবং তাদের ইতিহাস সম্পর্কে যে পরিমাণ অজ্ঞতা এবং ভুল ধারণা, সেখানে সাধারণ মানুষরা যে আহলে হাদীস সম্পর্কে অন্ধকারে থাকবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা।
__________________________________________
উদাহরণ ১ –
বাংলাদেশের প্রতিভাবান দ্বাইয়ী এবং প্রখ্যাত গবেষক ড. আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রহি’মাহুল্লাহ তার এক বক্তব্যে বলেছিলেন,
“আহলুল হাদীস মানে যারা হাদীস চর্চা করেন। অতীত যুগে আহলে হাদীস বলা হতো যারা মুহাদ্দিসিন…যারা হাদীস চর্চা করেন, যারা হাদীসের আলেম, যারা হাদীসের পন্ডিত তারা হচ্ছে আহলে হাদীস। আমাদের দেশে হানাফী আর আহলে হাদীস দুইটি ফিক্বহী মাযহাব হয়ে গেছে।”

উদাহরণ ২ –
জামআ’তে ইসলামীর “রাজনৈতিক ইসলাম” মতাদর্শে বিশ্বাসী শায়খ কামালুদ্দীন জাফরী বলেছেন,
“আহলে হাদীস বলা হয়, যারা মুহাদ্দিসিন তাদেরকে। যারা বড় বড় মুহাদ্দিসিন তারা হচ্ছেন আহলে হাদীস। সাধারণ লোকেরা আহলে হাদীস নয়।”

উদাহরণ ৩ –
বাংলাদেশের দেওবন্দী কওমী আলেমদের জোরালো কন্ঠস্বর, বাংলাদেশে সহীহ বুখারীর অনুবাদক এবং ব্যাখ্যাকার শায়খুল হাদীস আজীজুল হক্ক রহি’মাহুল্লাহর পুত্র মাওলানা মামুনুল হক্ক বলেছেন,
“(প্রাচীন চার মাযহাবের সাথে) অধুনা (অর্থাৎ আধুনিক যুগে) নতুন কিছু চিন্তাধারা চালু হয়েছে। একটি আহলে হাদীস স্কুল অফ থট, আরেকটি সালাফী স্কুল অফ থট। আমরা এইগুলোর কোনটাকেই একেবারে গোমরাহ বলিনা।”

উদাহরণ ৪ –
মধ্যমপন্থী বক্তা এবং উম্মতের ঐক্যের দাবীদার হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জনকারী শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন,
“আহলুল হাদীস বলা হয় বড় বড় মুহাদ্দিসগণকে। মূলত প্রাচীনকালে বড় বড় মুহাদ্দিসদেরকে আহলুল হাদীস বলা হতো।”
*উক্ত বক্তাদের ভিডিওগুলোতে আরো অন্যান্য ভুল বা বিভ্রান্তি থাকার কারণে তাদের বক্তব্যের ভিডিও লিংক এই লেখাতে যুক্ত করা হলোনা।
__________________________________________
প্রাচীনকাল থেকেই যেই সমস্ত মুসলমানেরা কোন একজন ইমাম বা কোন একটি নির্দিষ্ট মাযহাবের তাক্বলীদ না করে ক্বুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী আলেমদের কথা যাচাই-বাছাই করে আল্লাহ এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করাকে গুরুত্ব দেন, তারা নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে পরিচয় দিয়ে আসছেন। এটা নতুন কোন বিষয় না। এই নামে পরিচয় দেওয়া শুধুমাত্র পাক-ভারত উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়।
=> আসুন আমরা প্রাচীনকালের মুসলমান আলেম এবং ঐতিহাসিকদের লিখিত বই-পুস্তকের বর্ণনায় দেখি, আগের যুগে আহলে হাদীস বলতে কি শুধুমাত্র হাদীসের আলেমদের বুঝানো হতো নাকি, প্রকৃত সুন্নাহর অনুসারীদেরকে আহলে হাদীস বলা হতো?
__________________________________________
(১) “ইমাম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআ’ত”, আহমদ বিন হাম্বাল (মৃত্যুঃ ২৪১ হিজরী) রহি’মাহুল্লাহ বলেন,
“আমাদের নিকট, আহলুল হাদীস ঐ ব্যক্তি, যিনি হাদীসের উপর আমল করেন।”
উতসঃ মানাক্কিব আল-ইমাম আহমদ লি ইবনে জওযী, ২০৮ পৃষ্ঠা, সহীহ সনদ সহকারে।

(২) হাদীস সহীহ ও জয়ীফ নাকি এ সম্পর্কে নিজে আলেম না হলেও যারা হাদীস মানার চেষ্টা করেন, তারা আহলে হাদীসঃ
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ (যিনি ইমাম আহমদ এর অনেক ফতোয়া লিপিবদ্ধ করেছেন) তিনি বলেন, “আমি আমার পিতা আহমাদ বিন হাম্বালকে এক ব্যক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম, যে তার দ্বীন সংক্রান্ত বিষয় ‘তালাক্ব ও অন্যান্য বিষয়ের ক্বসম’ এর ব্যাপারে সওয়াল করতে চায় যে ব্যাপারে সে কিনা ফেতনার সম্মুখীন হয়েছে। সেখানে “আসহাবুল রায়” এর একটি দল এবং “আসহাবুল হাদীস” এর এমন একটি দল রয়েছে যারা ‘হাদীস মুখস্ত করেনা’ এবং ‘হাদীসের সনদ’ কোনটা দুর্বল আর কোনটা শক্তিশালী তা চেনেনা। এই দুই দলের উপস্থিতিতে সে কার কাছে ফতওয়া জিজ্ঞেস করবে? আহলুল রায়কে নাকি আহলুল হাদীস এর ঐ দলকে, যদিও তাদের হাদীসের ব্যাপারে জ্ঞান কম? ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রাহি’মাহুল্লাহ বললেন, “তারা যেন আসহাবুল হাদীস বা আহলে হাদীসকে ফতওয়া জিজ্ঞেস করে, (যদিও ঐ ‘আহলে হাদীস’ হাদীস সম্পর্কে কম জানে) তবুও তাদেরকেই জিজ্ঞেস করবে, কেননা য’ঈফ হাদীসও আবু হা’নীফাহর রায় (ফতোয়া) অপেক্ষা উত্তম।” কিতাবুস সুন্নাহ, আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বল, ১ম খন্ড ১৮০ পৃষ্ঠা, আমার পিতা ও অন্য মাশায়েখদের কাছ থেকে আবূ হানীফাহর ব্যাপারে কী স্মরণ রেখেছি অধ্যায়।
আমাদের মন্তব্যঃ উপরে উল্লেখিত ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহর দুইটি বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তার দৃষ্টিতে যারা নিজেরা বড় মুহাদ্দিস নয়, কিন্তু কোন একজন আলেমের তাকলীদ না করে হাদীস মানার চেষ্টা করেন, তারাও আহলে হাদীস।

(৩) হিজরী চতুর্থ শতাব্দীর প্রখ্যাত মুসলিম ভূ-পর্যটক শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল-মাক্বদিসী রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩৮০ হিজরী) বর্তমান পাকিস্থানের সিন্ধু প্রদেশের মানসূরা নামক অঞ্চলের মুসলমানদের অনুসৃত মাযহাব সম্পর্কে বলেছেন,
أَكْثَرُهُمْ أَصْحَابُ حَدِيْثٍ
উচ্চারণঃ আকসারুহুম আসহা’বু হাদীস।
অর্থঃ সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই হচ্ছে ‘আহলে হাদীস’। এছাড়া সেখানে আমি কাযী আবু মুহাম্মাদ মানসূরী নামে দাঊদী (দাউদ আয-যাহেরী) মাযহাবের অনুসারী একজন ইমামকে দেখলাম । ধর্ম প্রচার এবং লেখা-লেখি করার অভ্যাস ছিল তার। তিনি অনেক মূল্যবান পুস্তক রচনা করেছেন। আর মুলতানের অধিবাসীরা ছিলো শীয়া মতাবলম্বী। প্রত্যেক শহরেই কিছু কিছু হানাফী ফক্বীহ রয়েছেন। এখানে মালেকী, মু‘তাযেলী কেউ নেই, হাম্বলীও নেই।”
উতসঃ আহসানুত-তাক্বাসীম ফী মা’রিফাতিল আক্বালীমঃ পৃষ্ঠা ৪৮১।
আমাদের মন্তব্যঃ সুবহা’নাল্লাহ! আজ থেকে প্রায় ১১০০ বছর আগে শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল-মাক্বদিসী রহি’মাহুল্লাহ সিন্ধুর অধিকাংশ মানুষ আহলে হাদীস ছিলো বলে ইতিহাস লিখে গেছেন। এটা খুব সহজেই বোধগম্য যে, শামসুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল-মাক্বদিসী রহি’মাহুল্লাহ “আহলে হাদীস” দ্বারা সিন্ধু এলাকার বড় একটি জনগোষ্ঠীকে বুঝিয়েছেন, হাদীসের আলেম বুঝাননি। কেননা, একটি এলাকার অধিকাংশ মানুষ হাদীসের আলেম, এমন কথা একজন বোকা লোকেও বলবেনা।

(৪) হিজরী পঞ্চম শতাব্দীর ঐতিহাসিক আব্দুল ক্বাহির বাগদাদী রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ৪২৯ হিজরী) বলেন,
“রুম সীমান্ত, আলজেরিয়া, সিরিয়া, আযারবাইজান, মধ্য তুর্কিস্তান প্রভৃতি এলাকার সকল মুসলিম অধিবাসী ‘আহলে হাদীস’ মাযহাবের উপরে ছিলেন। তেমনি আফ্রিকা, স্পেন ও পশ্চিম সাগরের পশ্চাদবর্তী দেশসমূহের সকল মুসলিম ‘আহলে হাদীস’ ছিলেন। একইভাবে আবিসিনিয়ার উপকূলবর্তী ইয়ামনের সকল অধিবাসী ‘আহলে হাদীস’ ছিলেন। তবে তুরস্ক ও চীন অভিমুখী মধ্য তুর্কিস্তান সীমান্তের অধিবাসীদের মধ্যে দুইটি দল ছিলঃ একদল শাফেঈ ও একদল আবু হানীফার অনুসারী।”
উতসঃ আব্দুল ক্বাহির বাগদাদী, কিতাবু উসূলুদ্দীনঃ প্রথম খন্ড, ৩১৭ পৃষ্ঠা।
আমাদের মন্তব্যঃ আজ থেকে প্রায় ১০০০ বছর আগে আব্দুল ক্বাহির বাগদাদী রহি’মাহুল্লাহ ইতিহাস লিখে গেছেন শাম, ইউরোপের বড় অংশ জুড়ে যেই সমস্ত মুসলমান বসবাস করেন তারা হানাফী/মালেকী/শাফেয়ী বা হাম্বালী ছিলোনা। বরং সেখানকার সকল অধিবাসী ‘আহলে হাদীস’ ছিলেন।

(৫) ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রখ্যাত আলেন, ‘বড় পীর’ নামে খ্যাত শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী রহি’মাহুল্লাহ (জন্মঃ ৪৯১, মৃত্যু-৫৬১ হিজরী) বলেন,

وَأَمَّا الْفِرْقَةُ النَّاجِيَةُ فَهِيَ أَهْلُ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ قَالَ: وَأَهْلُ السُّنَّةِ لاَ إِسْمٌ لَهُمْ إِلاَّ إِسْمٌ وَّاحِدٌ وَّهُوَ أَصْحَابُ الْحَدِيْثِ–

অর্থঃ অতঃপর ফিরক্বা আন-নাজিয়া হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআ’ত। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআ’তের অন্য কোন নাম নেই একটি নাম ব্যতীত। আর তা হচ্ছে ‘আহলুল হাদীছ’।
উতসঃ আব্দুল ক্বাদির জীলানী রহি’মাহুল্লাহ রচিত কিতাবুল গুনিয়াহ ওরফে গুনিয়াতুত ত্বালেবীন। মিসর ছাপা, ১৩৪৬ হিজরী। প্রথম খন্ড, ৯০ পৃষ্ঠা।

আমাদের মন্তব্যঃ আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর আগে আব্দুল কাদের জীলানী রহি’মাহুল্লাহ বলে গেছেন, নাজাতপ্রাপ্ত দল হচ্ছে আহলে সুন্নাহ। আর প্রকৃত আহলে সুন্নাহর আরেকটি নাম হচ্ছে আহলে হাদীস। এর চাইতে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে যে, প্রাচীনকালের আলেমগণ ক্বুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী মুসলমানদেরকে আহলে হাদীস বলতেন, চাই তারা হাদীসের আলেম হোক কিংবা সাধারণ মুসলমান। কেননা, যারা আহলে হাদীস বলে পরিচয় দেয় না, যারা আহলে হাদীসদেরকে গালি দেয়, আব্দুল কাদের জীলানী রহি’মাহুল্লাহ তাদেরকে বিদআ’তী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
__________________________________________
সর্বশেষ,
ক্বুরআন পড়ুন, হাদীস পড়ুন। মুসলমানদের ইতিহাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। আলেমদের সাথে থাকুন, আলেমদেরকে ভালোবাসুন, আলেমদের কথা মানার চেষ্টা করুন। কিন্তু ক্বুরআন ও হাদীসের মতোই আমার আলেম যা বলেন, তার সব কথা ১০০% ঠিক, এমন অন্ধভাবে কারো কথা বিশ্বাস করবেন না। কোনটা হক্ক আর কোনটা বাতিল, একটু যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করুন।
ওয়ামা তাওফিক্বি ইল্লা বিল্লাহ।
__________________________________________

এই পোষ্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই সর্ম্পকিত আরোও দেখুন
© আভাস মাল্টিমিডিয়া সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯-২০২৪