লেখক, আব্দুল হাকিম
অধ্যয়নরত, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।
▪️প্রসঙ্গ: মাহফিল পোষ্টারে নামের হাল হাক্বীক্বত।
সহীহ মুসলিম এর ভূমিকায় এসেছে: আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَمَرَنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نُنَزلَ النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ -অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন লোকদেরকে তাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে মর্যাদা প্রদান করি [আচরণ করি]। আর এটাই ইসলামী আদব। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের বর্তমান বাস্তবতা চরমভাবে ইসলামী নীতির বিপরীত। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই লেখার উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট কেউ না। তবে যাদের নাম আসবে তাঁরা মনক্ষুন্ন হলে নিজ মনে ক্ষমা করে দিবেন।
▪️কিছু নমুনা-
আলোচক ১: শায়খ ডক্টর আবু বকর জাকারিয়া
২: শরীফুল ইসলাম মাদানী
৩: শায়খ রফিকুল ইসলাম বিন সাঈদ
৪: ডক্টর রেজাউল করীম মাদানী
.
প্রধান বক্তা: ব্রাদার রাহুল হুসাইন
বিশেষ বক্তা: ডক্টর রেজাউল করীম মাদানী
.
দ্বিতীয় বক্তা: শায়খ রফিকুল ইসলাম বিন সাঈদ
তৃতীয় বক্তা: শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক
.
আলোচক: শায়খ রফিকুল ইসলাম বিন সাঈদ
আলোচক: ডক্টর আহসানুল্লাহ বিন সানাউল্লাহ
.
প্রধান বক্তা: শায়খ রফিকুল ইসলাম বিন সাঈদ
দ্বিতীয় বক্তা: শায়খ ইন্দ্রিস মাদানী
.
প্রধান বক্তা: আব্দুল্লাহ বিন এরশাদ
দ্বিতীয় বক্তা: তানযীল আহমাদ
-হাফিযাহুমুল্লাহ আজমাঈন।
-উপরে যে নমুনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে এগুলো আমার তৈরি করা না; বরং বর্তমান মাহফিলের পোষ্টারের সচিত্র। একটা মাহফিলের পোষ্টার উক্ত মাহফিলের রুচিবোধের প্রকৃতি বহন করে। কোনো মাহফিল কমিটি হুট করেই কাউকে মেহমান করে আনেন না; বরং তাঁর সম্পর্কে জেনে-শুনে এবং সার্বিক নজরদারির পরে তাঁকে মেহমান হিসেবে আমন্ত্রণ করেন। সেহেতু অবশ্যই মাহফিল কর্তৃপক্ষের জানা থাকে যে, কোন মেহমান কতটুকু পড়াশুনা করেছেন এবং কতটা যোগ্যতা সম্পন্ন। তাছাড়া মাহফিল যারা আয়োজন করেন তারা অবশ্যই আলেমদের সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন। কাজেই পোষ্টারে তাঁদের কোথায় নাম রাখতে হবে এটা তারা ভালো করেই জানেন। তাই তারা মেহমানদের সাথে আলাপ আলোচনা করেই এটা নির্ধারণ করেন।
.
মাহফিলে একজন মেহমানের যোগ্যতার মাপকাঠি কী? ইলম নাকি জনপ্রিয়তা/সেলিব্রিটি! নিশ্চিতভাবে বলবেন ইলম। আচ্ছা, একটু ভেবে দেখবেন তো! একজন প্রকৃত আলেম; যিনি নিজের ইলমের পরিধি সম্পর্কে জানেন, তিনি কখনোই তার চেয়ে ইলমে অগ্রগামী আলেমকে তার নীচের স্থানে নাম দেখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন না। বরং তিনি নির্ধিদায় বলবেন এটা অমুকের উপর জুলুম করা হয়েছে। তাই না! কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি উল্টো। যার চিত্র উন্মুক্তভাবে বলার প্রয়োজন নেই। যদি নূন্যতম ইলমী যোগ্যতা ভেতরে থাকে, তাইলে নিজের মাঝেই এই লজ্জাবোধ জাগ্রত হবে।
.
এই দোষ মাহফিল কমিটির; নাকি মেহমানের? আমি অহরহ নজির দেখাতে পারব একদম নাম উল্লেখপূর্বক যে, অমুক আলেম তাঁর নাম উপরে না দেওয়ায় মাহফিলে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। অথচ তার ইলমের চেয়ে উপরের জনের ইলমী গভীরতা অনেক বেশি। কিন্তু তাঁকে জনগণ চেনে না। কিন্তু মাহফিল কর্তৃপক্ষ এসব আলেমদের কাছে একধরনের জিম্মি। কেননা যখন মাহফিলের পোষ্টার করা হয়ে যায় কিংবা সবকিছুর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে যায়; তখন তারা মাহফিল পণ্ড হয়ে যাওয়ার ভয়ে লজ্জায় মুখ খোলেন না। তখন তাদের মাধ্যমে যোগ্যতা সম্পন্ন আলেমরা জুলুমের স্বীকার হন। কাজেই দোষ মাহফিল কমিটির চেয়ে কোন অংশে এসব তথাকথিত সেলিব্রিটিদের কম নয়। আল্লাহ তা’আলা তাদের সুবোধের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিন। আমীন!
.এই বিষয়টা কিছুদিন আগেও তেমন গণহারে পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু বিগত কয়েকদিনে খুবই অত্যধিকহারে দেখা যাচ্ছে। শুধু নামে সহীহ আক্বীদা এবং সালাফী মানহাজের অনুসারী হলেই চলবে না বরং মু’আমালাতের ক্ষেত্রেও সহীহ চাল-চলন আয়ত্ত করা অত্যাবশ্যাক। সেটা ওলামা- আওয়াম সবাইকেই। আলেমদের প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকবে মাহফিল কমিটির সাথে প্রোগ্রাম কনফার্মের পূর্বেই আপনার ইলমী যোগ্যতা জানিয়ে দিন। আর মাহফিল কমিটির প্রতি একান্ত নিবেদন থাকবে কারো প্রতি জুলুম করবেন না। জুলুমের পরিণতি খুবই ভয়াবহ। মহান আল্লাহ আমাদের পরস্পরকে মিলেমিশে ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী দ্বীনী কাজ করার তৌফীক দান করুন। আমার ইচ্ছাকৃত- অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করে দিন। পরস্পর মুমিন ভাইয়ের মধ্যকার সম্পর্কগুলো সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় করে দিন।আমীন!
.
পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদীস স্বরণ করি। তিনি বলেন, إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ -অর্থাৎ, যখন অযোগ্য লোকের উপর কর্মের ভার অর্পণ করা হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা কর [সহীহ বুখারী, হা/৫৯]।