লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান
খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহি:)
‘শবে বরাত’ শব্দটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যবহার করেননি, সাহাবীরা ব্যবহার করেননি, তাবে’ঈরা ব্যবহার করেননি। এটা প্রায় পাঁচশো বছর পর তৈরি হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে পরিভাষাটি ব্যবহার করেছেন সেটা হলো- ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’ বা মধ্য শা’বানের রাত।
এক.
‘শবে বরাত’ বলাটা নাজায়েজ না; কিন্তু ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’ বলাটা সুন্নাত। কুর’আন-হাদীসে কোথাও ‘শবে বরাত’ শব্দটি পাবেন না, ঠিক যেমন কুর’আন-হাদীসের কোথাও নামাজ, রোজা শব্দগুলো পাবেন না। আপনি পাবেন সালাত, সিয়াম। তাই বলে, নামাজ-রোজা কুর’আন-হাদীসে নাই এজন্য এগুলো বললে নাজায়েজ হয়ে যাবে, এমন না। এগুলো পারিভাষিক শব্দ। নামাজ-রোজা এগুলো হলো ফারসি শব্দ।
আবার, কুর’আন-হাদীসের কোথাও ‘পীর’ শব্দটি নেই। ‘পীর’ শব্দটি ফারসি শব্দ, এর সমার্থক আরবি শব্দ হলো ‘শায়েখ’। এই ‘শায়েখ’ শব্দটিও কুর’আন-হাদীসে নেই। তবে এটার কুর’আনিক শব্দ হলো সোহবত-সাহেব।
ঠিক তেমনি কুর’আন-হাদীসে ‘শবে বরাত’ নেই, ‘লাইলাতুল বরাত’ও নেই। এর জায়গায় আছে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’।
কিছু মানুষ মনে করেন ‘নবীজি কিছু করেননি’ তাই সেটি বিদ’আত। না, নবীজী কিছু করেননি এই বলে সেটা বিদ’আত হবে না। নবীজি করেননি তাই সেটা ‘সুন্নাত’ না; কিন্তু সেটাকে সুন্নাত মনে করাটা বিদ’আত।
আবার আরেক গ্রুপ আছেন যারা ‘নবীজি করেননি’ কিন্তু সেটা জায়েজ। এই যে জায়েজ প্রমাণ করতে গিয়ে তারা নবীর সুন্নাতকে ছোটো বানিয়ে ফেলেন।
আপনারা খেয়াল করবেন, যদি কোনোকিছু জানতে পারেন যে সেটা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত; হোক সেটা ফরজ সুন্নাত, ওয়াজিব সুন্নাত, মুস্তাহাব সুন্নাত যাই হোক না কেন তার বাইরে কিছু ঢুকতে দিবেন না। আপনি যদি মানতে না পারেন তাহলে বলবেন, “ভাই, দু’আ করবেন, যেন সুন্নাতটি মানতে পারি।” কিন্তু, নবীজির সুন্নাতের বিপরীতে কোনো কিছুকে আনবেন না।
তারমানে প্রথমে আমরা যেটা বুঝলাম, ‘শবে বরাত’ বা ‘লাইলাতুল বরাত’ শব্দটি নবী, সাহাবী, তাবে’ঈ, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফে’ঈ, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (আল্লাহ সবার উপর রহম করুন) কেউ ব্যবহার করেননি, এটা অনেক পরে তৈরি হয়েছে।
সুন্নাতের মধ্যে নিরাপত্তা। সুন্নাতের বাইরে যেটা সেটা বিদ’আত না হলেও সমস্যা তৈরি করে। যেমন ‘শবে বরাত’ শব্দটি। আমরা যদি ‘মধ্য শা’বানের রজনী’ বলি তাহলে কোনো উত্তেজনা তৈরি করে না। কিন্তু যখনই আমরা বলবো ‘শবে বরাত’ তখনই আমাদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হবে, এটা বুঝি ভাগ্য রজনী।
শবে বরাত হলো গুনাহ মাফের রজনী। আরবীতে ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ মুক্তি। আমরা বাংলায় অর্থটি পাল্টে ‘বরাত’ বা ভাগ্য করে ফেলেছি।
বারাআত মানে মুক্তি। আল্লাহ শবে বারআতের রাতে বান্দার গুনাহ মাফ করেন, এটা সত্যি। এটা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
কিন্তু এই রাত্রিতে আল্লাহ ভাগ্য লিখেন, এই কথাটি কোনো হাদীসে নেই, কুর’আনের কোনো আয়াতে নেই; এই ব্যাপারে যতো হাদীস আছে সবগুলো জাল হাদীস, তাফসীরে যে দু-একটা কথা বলে হয়েছে, কোনো তাফসীরকারক সেটা সমর্থন করেননি।
যেসব তাফসীরকারক সমর্থন করেননি:
তাফসীর ইবনে কাসির।
জামিউল বায়ান, তাবারী।
আল-কাশশাফ, যামাখশরী।
ফাতহুল কাদীর, শাওকানী।
রূহুল মা’আনী, আলুসী।
তাফসীর-ই আশরাফী, আশরাফ আলী থানবী।
মা’রেফুল কুর’আন, মুফতী শফী।
এখন জিজ্ঞেস করবেন, শবে বারাআতের আমল কী? তিনটি বিষয় বলবো।
শবে বারাআত বা লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বানের রাত্রিতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, এটা সহীহ হাদীস।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দিকপাত করেন এবং মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করেন।” [সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৯০]
তারমানে এই রাত্রিতে আল্লাহ দুই শ্রেণীর মানুষ বাদে বাকিদেরকে ক্ষমা করেন। দুই শ্রেণী হলো:
মুশরিক।
বিদ্বেষ পোষণকারী।
তারমানে হলো শবে বারাআত হলো ‘কমন বোনাস’। এই রাত্রিতে আপনি যদি ঘুমিয়ে থাকেন, জেগে থাকেন, কিন্তু আপনার কোনো শিরক নেই, মনে কোনো বিদ্বেষ নেই তাহলে আল্লাহ আপনাকে মাফ করে দিবেন (ইন শা আল্লাহ)। আপনার একাউন্টে বোনাসটি জমা হয়ে যাবে।
এই রাতে আমরা আমল করবো কি-না?
আমল না করে ঘুমিয়ে থাকলেও আপনি বোনাস পাবেন। এই রাতে আমল করার ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না, তবে কিছু যঈফ হাদীস পাওয়া যায়। যঈফ হাদীসের আলোকে তিনটি আমল পাওয়া যায়।
কবর যিয়ারত। [সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯]
দু’আ করা। [আল-জামে আস-সাগীর: ৩৯৫২]
নামাজ পড়া। [সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮]
তবে সবগুলো হাদীসই যঈফ। কিন্তু, যেহেতু এই রাতের ফযিলত সহীহ, সেহেতু কেউ যদি অন্যান্য রাতে তাহাজুদ পড়ে, এই রাতেও পড়ে, অন্যান্য রাতে দু’আ করে, এই রাতেও করে, তাহলে এটাকে কিছু কিছু ইমাম মুস্তাহাব বা বৈধ বলেছেন। যেমন: ইমাম আল-আউযায়ী, ইমাম আশ-শাফে’ঈ (আল্লাহ সবার উপর রহম করুন)।
আমরাও মনে করি, যদি কেউ এই রাতে ব্যক্তিগতভাবে (আবারো বলছি, ব্যক্তিগতভাবে) তাহাজ্জুদ পড়ে, আল্লাহর কাছে দু’আ করে, তবে সেটা নাজায়েজ হবে না, বিদ’আতও হবে না। কয়েকটি কারণে এগুলো নাজায়েজ বা বিদ’আত হবে না:
সুন্নাত দ্বারা ফযিলত প্রমাণিত, এখানে যঈফ হাদীস দ্বারা আমল করলে বিদ’আত হবে না। তাবে’ঈদের মধ্য থেকে কোনো কোনো তাবে’ঈ এই রাতে ইবাদাত করেছেন। যেমন: আবু আব্দুল্লাহ মাকহুল, খালিদ বিন মা’দান, আবু আব্দুল্লাহ হিমসী, লুকমান ইবনু আমির (আল্লাহ সবার উপর রহম করুন)।
এই রাত্রিতে সমবেত হয়ে ইবাদাত করাকে সবাই বিদ’আত বলেছেন, মাকরূহ বলেছেন, এটা নিয়ে কোনো মতভেদ নাই। যেমন: প্রসিদ্ধ হানাফী ফকীহ আল্লামা হাসান ইবনু আম্মার শুরুম্বুলালী (রাহিমাহুল্লাহ)।
এই রাত্রিতে ভাগ্য লিখা হয় এই মর্মে যা আছে সবই জাল হাদীস। এমনকি শবে বারাআতের পরদিন রোজা রাখার ফজিলতের ব্যাপারে যে দুটো হাদীস আছে সেগুলোও জাল হাদীস পর্যায়ের।
তবে আমরা হাদীসে পাই, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন [সহীহ বুখারী: ১৯]
Its like you read my thoughts! You seem to understand
a lot about this, like you wrote the e-book in it or something.
I believe that you just can do with some p.c. to drive the
message house a bit, however instead of that,
that is fantastic blog. A great read. I will certainly be back.