যৌন সম্পর্ক বা সেক্সের নিয়ম, পদ্ধতি নিয়ে ইসলাম ধর্মের নামে বহু আজগুবি কথার প্রচলন আছে, যার কোনই ভিত্তি নেই। অথচ লোকেরা সেগুলোকেই ইসলামি বিধান মনে করে মেনে চলে ।
এখন যেহেতু বিয়ের মৌসুম চলছে কিংবা বিবাহিতরা
তো আছেই, যারা অবিবাহিত, তারাও এক সময় বিয়ে
করবে, তাই সবার জন্যই এই পোস্ট।
সমাজে যৌনমিলন বা সহবাস নিয়ে যেসব কথার
প্রচলন আছে-
– রাত্রি দ্বি-প্রহরের আগে সহবাস না করা,
– রবিবারে এবং বুধবারের রাত্রে সহবাস না করা,
– চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে
সহবাস না করা,
– স্ত্রীর জরায়ুর দিকে চেয়ে সহবাস না করা,
– সহবাসের সময় বেশি কথা না বলা,
– উলঙ্গ হয়ে কাপড় ছাড়া অবস্থায় সহবাস না করা কিংবা
চাদর এর নিচে করা,
– পূর্ব-পশ্চিম দিকে শুয়ে সহবাস না করা,
– শরীরে জ্বর ও বেশি গরমে স্ত্রী সহবাস
পাগল হয়ে যায়,
– ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস করলে কঠিন রোগ
হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমাদের দেশে মোকছেদুল মোমেনিন,
নেয়ামুল কুরআন, নেক আমলসহ কিছু চটি ধরনের
বইয়ে এসব বিষয় খুব সুন্দরভাবে ইসলামের নাম
দিয়ে বর্ননা করা আছে।
কিন্তু এগুলো কথার কোনটারই শরিয়তি ভিত্তি
নেই। এগুলোর কিছু জাল হাদিস, কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত
বিশ্বাস মাত্র।
রাসুল (সা) এর আগের সময় থেকে এগুলো
মূলত ইহুদীদের বিশ্বাস ছিল। আরবের
লোকেরাও তা মানত। তাদের এই ভুল বিশ্বাসের
প্রেক্ষিতে আল্লাহ তখন এই আয়াত নাযিল
করেন-
“তোমাদের স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য
শস্যক্ষেত্র। অতএব তোমরা তোমাদের শস্য-
ক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর”। (সুরা বাকারা:
২২৩)
ইসলামে শুধু চার অবস্থায় সেক্স হারাম-
১. পায়ুপথে বা এনাল সেক্স
২. মেয়েদের পিরিওডের সময় বা নিফাসের সময়
৩. রমজানের রোজার সময় দিনের বেলা
(সেহরির পর থেকে ইফতার পর্যন্ত)
৪. হজ্ব ও উমরার সময় এহরাম বাধা অবস্থায়।
এগুলো ছাড়া স্ত্রীর সাথে সেক্সের কোন
বাধা নিষেধ নেই। দিন বা রাত- যেকোনো সময়,
যেকোনোভাবে (শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে,
সামনে, পেছনে, উপর, নিচে ইত্যাদি ভাবে) যৌন
মিলন করা যায়।
ইসলামে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, স্বামী
স্ত্রীর মাঝে কোন পর্দা নেই। স্বামী
স্ত্রীর সকল অংগ একে অন্যের দেখার
অধিকার রয়েছে। সহবাসের সময় শরীরে কাপড়
রাখা বা না রাখা নিজের ইচ্ছার উপর।
(দুই সময় কাপড় দিয়ে সতর ঢাকার কোন
বাধ্যবাধকতা নেই-
এক. গোসল,
দুই. সহবাসের
সময়)
কেবলার দিক হয়ে সেক্স করা নিয়ে কোন বাধা
নিষেধ নেই ইসলামে (কেবলার দিক হয়ে শুধু
পেশাব পায়খানা করা নিষেধ আছে হাদিসে)।
ওরাল সেক্সের বিষয়ে অনেক আলেম
জায়েজ বলেছেন, আবার অনেক আলেম
মাকরুহ বলেছেন। যেহেতু শরিয়তে এটি সরাসরি
নিষেধ নেই, তাই নাজায়েজ কেউ বলেননি।
তবে, বীর্য ও যোনিরস গিলে ফেলা
নাজায়েজ।
যৌন মিলনে ইসলামের নিয়ম হল-
১. ফোর প্লে করা।
সহবাসের পুর্বে স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে
আদর, চুমো, আলিঙ্গন, স্পর্শ করে
পর্যাপ্তভাবে উত্তেজিত করাকে ফোর প্লে
বলে। এটি সুন্নত। স্বামী-স্ত্রীদের মাঝে
খেলা করতে রাসুল (সা) সাহাবীদের উৎসাহ
দিতেন।
এতে সুবিধা হল যে, একদিকে স্বামীর উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে স্ত্রীও
শারীরিক সম্পর্কের জন্য প্রস্তুত হয়।
২. দুআ পড়া।
এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সহবাসের শুরুতে
এই দুআ পড়তে হয়-
“বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বনা ওয়া
জান্নিবিশ শায়ত্বনা মা রাযাক্কতানা”
অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ!
আপনি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন
এবং আমাদেরকে আপনি যে সন্তান দান করবেন
তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখুন।
রাসুল (সা) বলেছেন, “যদি তোমাদের কেউ
স্ত্রী সহবাসের সময় উক্ত দুআ বলে এবং
তাদের ভাগ্যে সন্তান নির্ধারণ করা হয়, তবে শয়তান
কখনো তার ক্ষতি করবে না।”
(সহিহ বুখারি)
তাফসিরে কুরতুবিতে বলা হয়েছে, উক্ত দুআ না
পড়লে শয়তান এসে স্বামীর পুরুষাঙ্গ (পেনিস)
এর সাথে নিজেকে পেঁচিয়ে নিয়ে সেও
সহবাসে অংশগ্রহন করে।
ছোট্ট দুআ, মুখস্থ করাও সহজ। যাদের সহজে
মুখস্থ হয় না, তারা চাইলে একটা কাগজ বা কার্ডের
পেছনে লিখে মানিব্যাগে রাখতে পারে।
যেখানেই যাবে, একবার দু’বার করে দেখবে,
দুদিন পর মুখস্থ এমনি হয়ে যাবে।
৩. একাধিকবার সহবাস করলে, প্রত্যেক সহবাসের
পর ওযু করে এসে পরের সহবাস করতে হয়।
রাসুল (সা) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি
একবার মিলনের পর পুনরায় মিলনের ইচ্ছে
পোষণ করে, সে যেন এই দুইবারের মাঝে
ওযু করে নেয়।” (সহিহ মুসলিম)
৪. একটানা চার মাসের বেশি স্ত্রী থেকে দূরে
না থাকা।
অনেকে স্ত্রীকে এক জায়গায় রেখে
বছরের পর বছর নিজে আরেক জায়গায় থাকে।
একান্ত বাধ্য না হলে এমনটা করা ইসলামে সম্পুর্ন
নিষেধ। স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া ঈলা সময় (চার মাস)
এর বেশি দূরে থাকা যাবে না।
ভরণ পোষণ, খাদ্য, পোশাক- এটি স্ত্রী বিয়ে
ছাড়াও যে কোনভাবে (যেমন বাবার বাড়ি
থেকে, নিজে আয় করে) পেতে পারে..
কিন্তু স্ত্রীর শারীরিক সাপোর্ট শুধু স্বামীই
দিতে পারে। এসব থেকে স্ত্রীকে বঞ্চিত
করা বড় গুনাহর কাজ। জাহিলিয়াতের যুগে তারা এক
বছর, দুই বছর বা তার বেশি সময় স্ত্রী থেকে
দূরে থাকতো তাকে ইচ্ছে করে কষ্ট দেয়ার
জন্য।
যুদ্ধের ময়দানেও উমার (রা) সৈন্যদের সর্বোচ্চ
চার মাস রাখতেন, এরপর তাদের বাড়ি পাঠিয়ে
আরেক গ্রুপকে আনতেন।
৫. স্বামী স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্কের একান্ত
ব্যাপারগুলো অন্য কারো সামনে প্রকাশ, প্রচার না
করা।
রাসুল (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি নিজ স্ত্রীর সাথে
মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপন কথা
প্রকাশ করে দেয়, প্রচার করে, সে ব্যক্তি
কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট
ব্যক্তি হিসেবে গন্য হবে”। (সহিহ মুসলিম)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা) নারীদেরকেও তাদের
মিলনের কথা কারো কাছে বর্ননা করতে, প্রচার
করতে নিষেধ করেছেন।
বিয়ের পর অনেক সময় বন্ধু, বান্ধবী, ভাবীরা
বাসররাতের সেক্সের কথা শুনতে চায়, তাদের
কাছেও এসব বলা যাবে না।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যৌন মিলন একটা ইবাদত… এটি
স্বামীর কর্তব্য, আর স্ত্রীর অধিকার…
-ডা. তারাকী হাসান মেহেদী
রেফারেন্স:
১. হাদিসের নামে জালিয়াতি- ড. আব্দুল্লাহ
জাহাঙ্গীর। (রাহিঃ)
Leave a Reply